যে কারণে লিবিয়ার নারীরা বাইরে যেতে ভীতসন্ত্রস্ত

Date: 2023-12-12
news-banner
লিবিয়ায় জাতীয় এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর। তফসিল ঘোষণার পরপরই বিশিষ্ট রাজনৈতিক কর্মী হানান আল-ফাইদি আগ্রহের সঙ্গে বেনগাজি আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে এমপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন। 

তফসিল ঘোষণা এবং নির্বাচনের মধ্যে মাত্র ছয় সপ্তাহের ব্যবধান ছিল। তিনি দৃঢ়ভাবে সংকল্প করেছিলেন, নির্বাচনে জয়ের মধ্যে দিয়ে তিনি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশটির জন্য ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসার পাশাপাশি সমাজে বিভিন্ন ধরনের অসঙ্গতি ও সংঘাত দূর করবেন। তবে খুব দ্রুতই ২০ নভেম্বর ৪৬ বছর বয়সী হানান আল-ফাইদি তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। চূড়ান্ত ভোটগ্রহণের তখন মাত্র ৩৫ দিন বাকি ছিল। তার বিরুদ্ধে অনলাইনসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিদ্বেষপূর্ণ ও ঘৃণিত প্রচারণা শুরু করা হয়। এতে করে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। 

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদককে তিনি জানিয়েছেন, 'আমি ভয়ঙ্কর সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছিলাম যা আমার জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে,' তিনি বলেন, 'আমাকে হত্যার গুজব ছড়ানো ছাড়াও আমাকে অপমান এবং চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়। এতে আমার পরিবারের সদস্যরা ভীষণভাবে বিভ্রান্ত এবং হতাশ হন। আমি শুধু চেয়েছিলাম আমার সন্তানদের মানসিক কষ্টের অবসান ঘটাতে। তাই আমি নির্বাচনের মাঠ থেকে পালিয়ে চার দেয়ালে নিজেকে আটকে রাখি। 

বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়ানো হয় যে আল-ফাইদি বেনগাজিতে গাড়ি চালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। অনেকে দাবি করেন যে, আমার দগ্ধ মৃতদেহ একটি বিতর্কিত ও ঘৃণিত জায়গায় পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, 'আমার পরিবারের সদস্যরা শঙ্কা প্রকাশ করেন হয়ত সত্যিকারের হত্যাকাণ্ডের আগে এমন খবর ছড়ানো হচ্ছে। এবং আমি হয়তো নির্বাচনের আগেই সশস্ত্র গোষ্ঠীর অতর্কিত বা গুপ্ত হামলায় প্রাণ হারাবো। তখন সন্তান-স্বামীসহ স্বজনদের অনুরোধে এবং তাদের স্বস্ত্বি নিশ্চিতে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে সিদ্ধান্ত নেই।

বিভিন্ন রকমের সংঘাত ও সহিংসতার জেরে ভোটগ্রহণের দুইদিন আগে পিছিয়ে যায় সেই নির্বাচন। এখন পর্যন্ত লিবিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়নি সেই নির্বাচন। 

অনলাইনসহ সামাজিক মাধ্যমে ফাইদির মতো ভুক্তভোগী হচ্ছেন দেশটির হাজারো নারী। দেশটির পক্ষপাতদুষ্ট আইনি, সামাজিক-অর্থনৈতিক অবকাঠামোর কারণে নারীরা সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। 

২০১১ সালের আরব বসন্ত এবং দেশটির তিন দশকের স্বৈরশাসক মুয়ামি গাদ্দাফির পতনের পর ২০১৪ সালে দেশটিতে গণঅভ্যুত্থান ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় রাজনীতি এবং পার্লামেন্টে নারীর ক্ষমতায়ন আরো সীমিত করে ফেলা হয়। 

২০২১ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ৯৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তাদের মধ্যে নারী প্রার্থী ছিলেন মাত্র দু'জন। 

নারীদের মধ্যে যারা এমনসব প্রতিবন্ধকতা, অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন তাদের কণ্ঠরোধ করতে নেয়া হয়েছে ঘৃণিত প্রচারণা। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী। এমনসব নারীদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে চালানো হয় ঘৃণিত অপবাদ। 

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদী নারীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রচার করা হয় মিথ্যা সংবাদ। এতে করে লিবিয়ার  রক্ষণশীল সমাজে গৃহবন্দী হতে বাধ্য হন নারীরা।
image

Leave Your Comments