পথচারীদের জন্য দেশে সবচেয়ে বিপজ্জনক শহর এখন ঢাকা। সড়ক দুর্ঘটনায় ঢাকা শহরে বছরে যত মানুষ নিহত হন, তার চার ভাগের এক ভাগই পথচারী। গত তিন বছরে ধারাবাহিকভাবে ঢাকায় দুর্ঘটনা ও মৃত্যু—দুটোই আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। যার বড় শিকার সাধারণ পথচারীরা।
ঢাকায় প্রয়োজনের তুলনায় সড়ক এমনিতেই কম। মোট সড়কের তুলনায় হাঁটার রাস্তা বা ফুটপাত আরও কম। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ২ হাজার কিলোমিটারের কিছু বেশি। এর বিপরীতে ফুটপাত রয়েছে মাত্র ৬০০ কিলোমিটারের মতো। আবার যে ফুটপাত রয়েছে, তার বেশির ভাগই চলাচলের অনুপযোগী।
সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার সড়কগুলো একেবারেই পথচারীবান্ধব নয়। বেশির ভাগ ফুটপাতও অবৈধ দখলে, যে কারণে অনেক ক্ষেত্রে মূল সড়ক দিয়ে হাঁটতে বাধ্য হন পথচারীরা। আবার পথচারীদের মধ্যেও অসচেতনতা রয়েছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সড়কে আধুনিক সংকেতব্যবস্থা না থাকায় সড়কের প্রতিটি মোড় ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় পথচারীদের। ফলে ঢাকায় দুর্ঘটনায় পথচারীদের মৃত্যু বেশি।
সড়ক পার হতে গিয়ে বাসচাপায় বা অন্য কোনো যানবাহনের ধাক্বায় মৃত্যু-ঢাকা শহরে এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর গুলিস্তানে সড়ক পার হওয়ার সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর ক্ষতিগ্রস্ত সকল সড়ক ও সেতু মেরামত করে যোগাযোগ অবকাঠামো পুনঃস্থাপন করেন। তিনি ১৯৭৪ সালের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত সব সেতু আবার নির্মাণ করে চলাচলের উপযোগী করেন। পাশাপাশি তিনি ৪৯০ কি.মি. নতুন সড়কও নির্মাণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়নের পাশাপাশি নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। সড়ককে নিরাপদ করতে ডিভাইডার স্থাপন, বাঁক সরলীকরণ, সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, মহাসড়কে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণ ও গতি নিয়ন্ত্রক বসানোসহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আনতে দক্ষ চালক তৈরি এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর এবং টেকসই ও নিরাপদ মহাসড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, এবারই প্রথম সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির পরিবারকে এককালীন অন্যূন ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানিসহ আহত ব্যক্তিকে অন্যূন ৩ (তিন) লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে স্বয়ংক্রিয় মোটরযান ফিটনেস সেন্টার চালু করা হয়েছে। ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রবর্তনের মাধ্যমে বিআরটিএ’র প্রায় সকল সেবা ডিজিটালাইজড করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ৬ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ রোড সেফটি প্রজেক্ট’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি আশা করেন, নিরাপদ সড়কের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে পারব; ইনশাল্লাহ।