ম্যাক্সওয়েলের ঐতিহাসিক ডাবল সেঞ্চুরিতে সেমিতে অস্ট্রেলিয়া

Date: 2023-11-08
news-banner
ফেরার ম্যাচেই ইতিহাস গড়লেন গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল! বড় ইনিংস খেলার পথে হ্যামস্টিংয়ের চোটে পড়েছেন, কিন্তু থামেননি। এক পায়ে ভর করে শট খেলেছেন লম্বা সময়, একা হাতে নিশ্চিত করেছেন দলের জয়। 

আগে ব্যাট করতে নেমে ইব্রাহিম জাদরানের শতকে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রানের বড় সংগ্রহ পায় আফগানরা। বিশ্বকাপে এর আগে কখনোই এতো রান তাড়া করে সফল হয়নি অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯৬ বিশ্বকাপ আসরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৮৭ রান তাড়া করা ছিল তাদের আগের সর্বোচ্চ। সেই রেকর্ড লক্ষ্য তাড়ায় আফগান বোলারদের তোপে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে চাপে পরলেও ম্যাক্সওয়েলের রেকর্ড ডাবল শতকে ১৯ বল হাতে রেখেই ৩ উইকেটের জয় পায় অজিরা। এতে তৃতীয় দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল অস্ট্রেলিয়া। 

আফগানিস্তানের দেয়া ২৯২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৯ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপর দলীয় ৯১ রানের মধ্যে নেই আরও তিন উইকেট। এমন অবস্থায় অনেকে আরেকটি আফগান রূপকথার গল্প দেখার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

কিন্তু এই ধ্বংসস্তূপ থেকেই অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়ে ইতিহাস গড়েছেন গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল। অষ্টম উইকেট জুটিতে প্যাট কামিন্সকে নিয়ে ম্যাক্সওয়েল ২০২ রানের জুটি গড়েছেন। এর মধ্যে মাত্র ১২ রান এসেছে কামিস্নের ব্যাট থেকে। বাকি সব রানই ম্যাক্সওয়েলের।

৭৬ বলে পেয়েছেন বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরিকে দেড়শ বানাতে তার লেগেছে ১০৪ বল। আর ১২৮ বলে ডাবল সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছেড়েছেন ম্যাক্সওয়েল। ইনিংস জুড়ে ১০টি ছক্কা আর ২১টি চারে এক ম্যাচ হাতে রেখেই অস্ট্রেলিয়ার সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করেছেন তিনি।

আফগানিস্তানের দেওয়া ২৯২ রানের লক্ষ্য অজিদের হয়ে ইনিংস ইনিংস উদ্বোধনে নামেন ট্রাভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নার। তবে শুরুটা ভালো হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। জুটি গাড়ার আগে ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই হেডকে প্যাভিলিয়নের পথে পাঠান নাভিন। দ্বিতীয় উইকেটে ব্যাটে নামেন মিচেল মার্শ।  উইকেটে এসেই ঝড়ো গতিতে রান তুলতে থাকেন তিনি। তবে ম্যাচের ষষ্ঠ ওভারে তাকে থামিয়ে দেন নাভিন উল হক। আউট হওয়ার আগে ১১ বলে ২৪ করেন তিনি।

তৃতীয় উইকেটে ব্যাটিংয়ে আসেন মার্নাস লাবুশেন। উইকেটে থিতু হবার আগেই আবারও জুটি ভেঙে অজিদের চাপ বাড়িয়ে দেয় আফগানরা। দলীয় ৪৯ রানে আজমতউল্লাহ ওমরজাই এর জোড়া শিকারে চাপে পড়তে হয় প্যাট কামিন্সদের। প্রথমে ডেভিড ওয়ার্নারকে ফেরান। পরের বলেই গোল্ডেন ডাক মেরে সাজঘরে ফেরেন জশ ইংলিস। ওয়ার্নার করেন ২৯ বলে ১৮ রান।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে চাপে পরে যাওয়া অজিদের একপ্রান্তে ব্যাট হাতে লড়াই চালিয়ে যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তবে অন্যপ্রান্তে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন মার্নাস লাবুশেনে ও মিচেল স্টার্ক।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে একটা সময় ছিটকে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। এমন পরিস্থিতিতে দলকে রক্ষার দায়িত্ব নেন ম্যাক্সওয়েল। প্যাট কামিন্সকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাক্সওয়েল যেটি করেছেন তাতে ইতিহাস হয়ে থাকবেন তিনি। ইনজুরিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে ডাবল সেঞ্চুরি করে ১৯ বল হাতে রেখেই ৩ উইকেটের জয় তুলে নেয় অজিরা। 

এর আগে ওয়াংখেড়েতে আগে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তানের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। এই দুই ওপেনারে ভালো শুরু করেণ আফগানরা। তাদের জুটি ৩৮ রান যোগ করেই ইনিংসের অষ্টম  ওভারের গুরবাজ আউট হন। আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরার আগে ২১ রান করেন এই ব্যাটার। পরে দ্বিতীয় উইকেটে ব্যাট করতে আসেন রহমত শাহ। তাকে সঙ্গে নিয়ে দেখে শুনে খেলতে থাকেন আরেক ওপেনার ইব্রাহিম।

এই দুই জুটিতে ৮৩ রান গড়েন জাদরান-রহমত। তবে দলীয় ১২১ রানে ম্যাক্সওয়েলের ঘূর্ণিতে কাটা পড়ে সাজঘরে ফেরেন রহমত। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৩০ করেন এ ডানহাতি ব্যাটার। এরপর ক্রিজে আসেন আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদী। উইকেটে এসে থিতু হলেও ব্যক্তিগত ইনিংস লম্বা করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। দলীয় ১৭৩ রানে ২৬ করে আউট হন শাহিদী। 

আফগান অধিনায়কের বিদায়ে উইকেটে আসেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। তাকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় ইনিংস বড় করতে থাকে ইব্রাহিম। তবে এ জুটও বেশি এগোতে পারেননি। দলীয় ২১০ রানে ২২ করেই বিদায় নেন ওমরজাই। এরপর উইকেটে আসেন মোহাম্মদ নবী। তবে ব্যর্থ হয়ে সাজঘরে ফেরেন এ অভিজ্ঞ ব্যাটার।

কিন্তু একপ্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রাখে ওপেনার ইব্রাহিম। অজি বোলারদের তুলোধুনো করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরিও তুলে নেন তিনি। এছাড়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথম শতকের দেখাও পেয়ে যান এই আফগান ওপেনার। আর শেষ মুহূর্তে ঝড়ো গতিতে রান তোলেন রশিদ খান।

এতে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রানে থামে আফগানদের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন জশ হ্যাজেলউড।
image

Leave Your Comments