দোষে গুনে মানুষের জীবন। এই পৃথিবীতে নিষ্পাপ কেউ নেই অতএব নিজের মধ্যে দোষ রেখে অন্যের
দোষ খুঁজতে যাওয়া মানেই চরম বোকামি ও নির্লজ্জতা। ইসলাম ধর্মে অন্যের দোষ অনুসন্ধান ও মন্দ ধারণা
করাকে পাপ হিসাবে গণ্য করা হয়।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে এরশাদ করেন, یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا کَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫
اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوۡا وَ لَا یَغۡتَبۡ
بَّعۡضُکُمۡ بَعۡضًا ؕ اَیُحِبُّ اَحَدُکُمۡ اَنۡ یَّاۡکُلَ لَحۡمَ
اَخِیۡهِ مَیۡتًا فَکَرِهۡتُمُوۡهُ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ
اللّٰهَ تَوَّابٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۲﴾
“হে
মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান তো পাপ।
আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের
মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই
করে থাক। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা কবূলকারী,
অসীম দয়ালু’” (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১২)
অন্যের ব্যক্তিগত পাপাচার ও দোষ অনুসন্ধান করা, ক্ষতি করা, ব্যক্তিগত
স্বার্থ অর্জনের জন্য কারো পেছনে লেগে থাকা, গীবত করা ও গোয়েন্দাগিরি করা নিষিদ্ধ। পরের দোষ খোঁজা কিছু মানুষের কু-স্বভাব।
লুকিয়ে কারো কথা শোনা, ঘরের ভেতর উঁকি দেওয়া, ফেসবুকের আইডি হ্যাক করা,
পাসওয়ার্ড চুরি করা, ইনবক্স চেক করা, গোপনীয়ভাবে কারো ছবি তোলা, ভিডিও ধারণ
করা, কথা রেকর্ড করা ইত্যাদি হারাম। তবে দেশ, সমাজ ও মানুষের নিরাপত্তা
বিধান নিশ্চিত, শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা প্রকল্পে, চোর-ডাকাত, খুনি,
সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ, মাদক কারবারি, ঋণখেলাপি, প্রতারক ও ধ্বংসাত্মক
কাজে লিপ্ত লোকদের খোঁজে বের করতে গোয়েন্দাগিরি করা যাবে ।
অথচ আমাদের দয়াল নবী (সা.) অন্যের দোষ
এড়িয়ে যেতে বলেছেন। অন্যের দোষ-ত্রুটি খোঁজার মন্দ পরিণতি বর্ণনা করে তিনি
বলেন,
“হে ঐ
জামাআত, যারা মুখে ইসলাম কুবুল করেছ কিন্তু অন্তরে এখনো ঈমান মাজবুত হয়নি।
তোমরা মুসলিমদের কষ্ট দিবে না, তাদের লজ্জা দিবে না এবং তাদের গোপন দোষ
অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না। কেননা, যে লোক তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ
অনুসন্ধানে নিয়োজিত হবে আল্লাহ তা’আলা তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন। আর
যে ব্যক্তির দোষ আল্লাহ তা’আলা প্রকাশ করে দিবেন তাকে অপমান করে ছাড়বেন,
সে তার উটের হাওদার ভিতরে অবস্থান করে থাকলেও।। (তিরমিজি, হাদিস : ২০৩২)
অন্য হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের
গোপনীয় বিষয় গোপন রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার গোপনীয় বিষয় গোপন রাখবেন।
আর যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপনীয় বিষয় ফাঁস করে দেবে, আল্লাহ তার
গোপনীয় বিষয় ফাঁস করে দেবেন। এমনকি এই কারণে তাকে তার ঘরে পর্যন্ত অপদস্থ
করবেন। (ইবনু মাজাহ : ২৫৪৬)
আসুন নিজের ভেতর যেসব বদস্বভাব বা দোষ আছে তা খুঁজে বের করি এবং
এর প্রতিকার করি, নিজেকে ত্রুটিমুক্ত রাখি।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে বলেন, তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের চোখে পতিত সামান্য
ময়লাটুকুও দেখতে পায়, কিন্তু নিজ চোখে পতিত খড়কুটাও (বেশি ময়লা) দেখে না।
(সহিহ ইবনে হিববান, হাদিস : ৫৭৬১)