ঋণ পরিশোধে হিমশি খাওয়া চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্মীদের দিচ্ছে প্রণোদনা

Date: 2023-12-10
news-banner

নিজস্ব প্রতিবেদনঃ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে ঋণ নিয়ে। চলতি বছর থেকে ঋণের কিস্তিও পরিশোধে হিমশিম খেতে হচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসাকে। সরকারের ভর্তুকিতে চলা এ সংস্থা আর্থিক সংকটের মধ্যেই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রণোদনা দেওয়ার মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেতন-ভাতার বাইরে দুটি করে মূল বেতন বিশেষ পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।

নথি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ওয়াসা বোর্ডের ৭৩ তম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎসাহ বোনাস বা প্রণোদনা দেওয়ার জন্য কমিটি গঠন করে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

বোর্ড সদস্য শেখ মোহাম্মদ শফিউল আজমকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল । কমিটি গত ৪ এপ্রিল সভা করে। সভায় সদস্যরা বোর্ডের অনুমোদনের জন্য সাতটি সুপারিশ দিয়েছেন। বোর্ড অনুমোদন দিলেই প্রণোদনা পাবেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নগরে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কর্ণফুলী পানির সরবরাহ প্রকল্প (ফেইজ ১ ও ২), শেখ রাসেল পানি শোধনাগার, মোহরা পানি শোধনাগারের মতো প্রকল্পগুলো দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করে আসছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশাসনিক কাজে দক্ষতা, গ্রাহকসেবায় মানোন্নয়ন এবং সুপেয় পানি সরবরাহ করে কর্তৃপক্ষের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে আসছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। ফলে দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রণোদনা/সম্মানী হিসেবে প্রদান করা যেতে পারে। পাশাপাশি প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে একটি স্থায়ী নীতিমালা তৈরিরও সুপারিশ করে কমিটি।

সংস্থার এই সিদ্ধান্ত জানাজানি হওয়ার পর তৈরি হয়েছে সমালোচনা। গ্রাহকেরা বলছেন, একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে ঋণের টাকায়। ঋণের কিস্তি শোধ করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। গত বছর দুইবার পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে একলাফে ৩৮ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। এ বছরও পানির দাম বাড়ানো হবে, এমন আলোচনা রয়েছে। ফলে এমন পরিস্থিতিতে প্রণোদনার পেছনে কোটি টাকা খরচ করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বেতন-ভাতার নথী অনুযায়ী, চট্টগ্রাম ওয়াসায় বর্তমানে ৫৬৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন। অক্টোবর মাসে তাঁদের মূল বেতন ছিল প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দুই মাসের মূল বেতন বোনাস হিসেবে দিতে ব্যয় হবে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।

জানতে চাইলে এ কে এম ফজলুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, “প্রণোদনা দেওয়ার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এটি বোর্ড সভায় পাঠানো হবে। এরপর বোর্ডের অনুমোদন নিয়েই প্রণোদনা দেওয়া হবে”। প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সব খরচ বাদ দিয়ে কিছু টাকা থাকলে প্রণোদনা দেওয়া উচিত। আমাদের প্রকল্প থেকে কিছু টাকা বেঁচে যায়। পানি সরবরাহও এখন ভালো আছে। ফলে এসব চিন্তা করে বোর্ডে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’

ওয়াসা গত এক যুগে ঋণের টাকায় পানি শোধনাগার নির্মাণ, নতুন সরবরাহ লাইন স্থাপন ও পয়োনিষ্কাশন লাইন নির্মাণের চারটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। টাকার হিসাবে প্রায় ৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ জন্য তিনটি বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে অন্তত ৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে সংস্থাটি। এখন পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের জন্য আরও প্রায় ১৬ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হচ্ছে।

২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা গত বছর জানুয়ারিতে একদফা দাম বাড়ানো হয়। তখন দাম ছিল আবাসিকে ১ হাজার লিটার ১৩ দশমিক শূন্য ২ টাকা, বাণিজ্যিকে ৩১ দশমিক ৮২ টাকা। পরে সেপ্টেম্বরের একলাফে ৩৮ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। বর্তমানে আবাসিকে দাম পড়ছে ১৮ টাকা, বাণিজ্যিকে ৩৭ টাকা।

ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ না নিয়ে প্রনোদনার নামে টাকা অপচয়কে অনৈতিক বলে মনে করেন সাধারণ ক্রেতা। কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, যেখানে সরকার ভর্তুকি  দিয়ে সংস্থাটি পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছেন সেখানে ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ না নিয়ে এভাবে টাকা অপচয় করা অনৈতিক।

image

Leave Your Comments