ব্যারিকেড ভেঙে ইসলামবাদে ঢুকে পড়েছে ইমরান খানের সমর্থকেরা

Date: 2024-11-26
news-banner
পুলিশের স্থাপন করা ব্যারিকেড ভেঙে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে ঢুকে পড়েছেন ইমরান খানের সমর্থকেরা। তাঁরা ঢুকে পড়ার পরপরই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেছে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে তাঁর সমর্থকেরা আজ মঙ্গলবার রাজধানী ইসলামাবাদে ঢুকে পড়েন। কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেও তাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসলামাবাদে সেনাবাহিনী নামিয়ে ‘দেখামাত্র গুলি করার’ নির্দেশ দেওয়ার পরও বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এর আগে ইসলমাবাদে প্রবেশের রাস্তাগুলোতে শিপিং কনটেইনার দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হলেও সেগুলো থোড়াই করে রাজধানীতে ঢুকে যান ইমরান খানের সমর্থকেরা।
আজ মঙ্গলবার রাতে একটু পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকভি আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি বিক্ষোভকারীরা অস্ত্র ব্যবহার করে গুলি চালায়, তবে নিরাপত্তাবাহিনীও গুলি করে জবাব দেবে। তিনি বলেন, ‘যদি তারা আবার গুলি চালায়, তবে গুলির জবাব গুলিতেই দেওয়া হবে।’

পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলো বেশির ভাগই প্রতিবাদ সমাবেশের ছবি ও ভিডিও ধারণ বন্ধ করে দিয়েছে। তারা এখন মূলত নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং ফাঁকা রাস্তাগুলোর ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনপিআরের খবরে বলা হয়েছে, ইমরান খানের সমর্থকেরা ইসলামাবাদের রেড জোন—যেখানে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো অবস্থিত—সেখান থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নকভি বলেছেন, ইমরান খানের দলকে শহরের উপকণ্ঠে সমাবেশ করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

এই আন্দোলনের অন্যতম নেতা ইমরান খানের স্ত্রী খানের স্ত্রী বুশরা বিবি বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে রেড জোনের দিকে এগিয়ে যেতে বলেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘যদি খানকে মুক্তি না দেওয়া হয়, তবে বিক্ষোভকারীদের জন্য নতুন কর্মপরিকল্পনা জানানো হবে।’ এ সময় তিনি সরকারের প্রতি বিক্ষোভকারীদের ক্ষতি না করার আহ্বান জানান।
এদিকে, বিক্ষোভ প্রতিহত করার জন্য পুলিশ গত শুক্রবার থেকে ৪ হাজারের বেশি পিটিআই নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং দেশের কিছু অংশে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদের হাইকোর্ট রাজধানীতে সমাবেশ নিষিদ্ধ করে রায় দেয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নকভি বলেছেন, কেউ এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে।

শিপিং কনটেইনার দিয়ে রাস্তা আটকে দেওয়ার ফলে ইসলামাবাদ ও অন্যান্য শহরের মধ্যে যাতায়াত কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজধানীতে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় মেসেজিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।
পিটিআই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে প্রচার চালাচ্ছে এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আন্দোলনের তথ্য, এমনকি ঘটনাগুলোর বিবরণ শেয়ার করছে। পাকিস্তানে নিষিদ্ধ এক্স প্ল্যাটফর্মটি এখন আর ভিপিএন দিয়েও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, এই সহিংসতা এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো পাকিস্তান সফরে রয়েছেন।

প্রায় দেড় শতাধিক মামলায় অভিযুক্ত ইমরান খান এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে। তিনি এখনো দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) বলছে, এই মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেবল ইমরান খানকে বন্দী করায় নয়, দেশটির মানুষ মূল্যস্ফীতির কারণেও ফুঁসে উঠেছে।
image

Leave Your Comments