ফুল হাতে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে লাখো মানুষ। আছেন নারী, শিশু, তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে আছেন বৃদ্ধরাও। কাকডাকা ভোরে তাদের এমন অপেক্ষায় থাকার বিষয়টি দেখেই মনে হয়েছে আজকের দিনটি অন্যদিনের মতো না। আসলেই তো তাই। আজকের দিনটি তো বাঙালি জাতির জন্য গৌরবের। কারণ ৫৩ বছর আগে এই দিনেই কোটি বাঙালির স্বপ্নের বিজয়গাঁথা রচনা হয়েছিল। এই দিনেই বাঙালি পেয়েছিল দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফসল। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল এমন স্বাধীনতা, তাদের স্মরণ করতেই ভোর থেকে লাখো মানুষ ফুল হাতে অপেক্ষা করছিলেন সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায়।
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। অবশেষে অপেক্ষার অবসান হয় সকাল সাতটার দিকে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর এসব মানুষের শ্রদ্ধার ফুলে ভরে যায় জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদি।
বিজয়ের ৫৩ বছরে শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর শহীদদের এভাবেই শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় স্মরণ করছে জাতি।
ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা। সাড়ে ছয়টার পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় দুজন সেখানে কিছু সময়ের জন্য নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
সরকারপ্রধানের শ্রদ্ধা জানানোর পর সর্বস্তরের মানুষের জন্য স্মৃতিসৌধ এলাকায় খুলে দেওয়া হয়। এরপর ফুল হাতে জনতার ঢল নামে সৌধ প্রাঙ্গণে। অল্প সময়ের মধ্যে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদের স্মৃতির মিনার।
বিজয় দিবসের আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে স্মৃতিসৌধ এলাকা থেকে শুরু করে গোটা সাভার পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে। শিশু-ছেলে-বুড়োসহ সব বয়সী মানুষের উপস্থিতি অন্যরকম এক আবহের সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, আধাসরকারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ। তাদের ফুলেল শ্রদ্ধায় ভরে ওঠে শহীদ বেদী। স্মৃতিসৌধে আসা অনেকের হাতে দেখা যায় লাল-সবুজের পতাকা আর রঙবেরঙের ফুল। পোশাকেও লাল-সবুজের সরব উপস্থিতি। অনেকের হাতে শোভা পাচ্ছে ব্যানার। অনেকের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে দেশের গান।
বিজয়ের ৫৩ বছরে যুদ্ধাহত অনেক মুক্তিযোদ্ধাও এসেছেন শ্রদ্ধা জানাতে। তাদের অনেকের হাতে শোভা পায় লাল-সবুজের বিজয় নিশান।
ফুল দিতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী জামিল হোসেন বলেন, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে ভোরে ঢাকা থেকে রওনা হয়েছি। অনেক মানুষ এসেছে স্মৃতিসৌধে। শ্রদ্ধা জানাতে পেরে অনেবক ভালো লাগছে।
ংধাধৎ-২বাবা-মায়ের সঙ্গে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন শারমিন সুলতানা। রাজধানীর একটি স্কুলে পড়ুয়া দশম শ্রেণির এই ছাত্রী বলেন, বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসার পরিকল্পনাটা ছিল অনেক আগেই। কখন আসব তর সইছিল না। রাতে ঠিকভাবে ঘুমাতে পারিনি। অবশেষে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পেরে খুব ভালো লাগছে।