২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল, সাভারের রানা প্লাজা ভবন ধসে পড়ার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত। ওইদিন সকাল ৯টার দিকে আটতলা ভবনটি ধসে পড়ে, যার ফলে ১,১৭৫ জন শ্রমিক নিহত হন এবং প্রায় ২,৪৩৮ জন আহত হন। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন পোশাক শ্রমিক, যারা জীবিকার তাগিদে কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারান।
দুর্ঘটনার পর উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ বিভিন্ন সংস্থা অংশ নেয়। ২১ দিনব্যাপী উদ্ধার অভিযানে ১,১৭৫টি মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং ৮৮৪টি মরদেহ শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকী মরদেহগুলোর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে দাফন করা হয়। দুর্ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়।
দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন মামলা দায়ের করা হলেও বিচার প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি। মামলার বিচার কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা ও আইনি জটিলতার কারণে নিহতদের পরিবার ও আহতরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দুর্ঘটনার ১১ বছর পরও মামলার বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত হয়নি।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দুর্ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য চাপ সৃষ্টি হয়। তবে বাস্তবে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের জন্য বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সহায়তা প্রদান করছে। 'অরকা হোমস' নামক একটি প্রতিষ্ঠান রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে নিহত শ্রমিকদের সন্তানদের আশ্রয় ও শিক্ষা প্রদান করছে। এই ধরনের উদ্যোগগুলো নিহতদের পরিবারের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনরা ন্যায়বিচার ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। তারা সরকারের কাছে দ্রুত বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করার এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব। এই দুর্ঘটনার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।