সৌম্য সরকারের অবিস্মরণীয় ইনিংসে নেলসনে লড়াকু সংগ্রহই পেয়েছিল বাংলাদেশ। গড়েছিল নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। তবে এ রান নিয়েও ন্যূনতম লড়াই করতে পারল না বাংলাদেশি বোলাররা। কিউইদের কাছে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে টাইগাররা।
ফলে তিন ম্যাচের সিরিজ হারও (২-০) নিশ্চিত হলো নাজমুল হোসেন শান্তর দলের।
সেক্সটন ওভালে বলতে গেলে কোনো পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশি বোলাররা। ২২ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড। এর আগে, সৌম্য সরকারের ১৬৯ রানের সুবাদে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে একদিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ৪৯.৫ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে করে ২৯১ রান।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে নিউজিল্যান্ড শুরু থেকেই ছিল আগ্রাসী। বাংলাদেশি বোলারদের কোনো সুযোগই দিচ্ছিলেন না উইল ইয়াং ও রাচিন রবীন্দ্র। দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়ে রবীন্দ্র যখন থামেন, তখন দলের স্কোরবোর্ডে উঠে গেছে ৭৬ রান। ৩৩ বলে ৪৫ রান করা রবীন্দ্র ফেরেন হাসান মাহমুদকে উইকেট দিয়ে।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন ইয়াং-নিকোলস। ১২৮ রানের জুটি গড়ে দুজনে ম্যাচ নিয়ে যান বাংলাদেশের নাগালের বাইরে। অবশ্য এ দুই ব্যাটারই ফিরেছেন সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপ নিয়ে। ৮৯ রানে ইয়াং বিদায়ের পর ৯৫ রানে সাজঘরে ফেরেন হেনরি নিকোলস। ইয়াংকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান হাসান। নিকোলসের উইকেট তুলে নেন শরীফুল ইসলাম।
এরপর জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন টম লাথাম ও টম ব্লান্ডেল। ৩২ বলে ৩৪ রান করে অপরাজিত থাকেন লাথাম। ব্লান্ডেল করেন ২০ বলে ২৪ রান।
এর আগে, বাংলাদেশের রেকর্ড সংগ্রহের পুরো কৃতিত্বই সৌম্য সরকারের। তিনবার জীবন পেয়েছেন বটে, তবে সেটা কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ার সেরা ১৬৯ রানের অনবদ্য, চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। এদিকে, এটিই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোনো এশিয়ান ব্যাটারের সর্বোচ্চ স্কোর। আগে রেকর্ডটি ছিল ভারতের শচীন টেন্ডুলকারের।
নিউজিল্যান্ড টসে জিতে সফরকারী দলকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে চাপে ফেললেও সৌম্য ছিলেন অবিচল। আগের দুই ওয়ানডেতেই যে তিনি ডাক মেরেছেন, তা বোঝা গেল না তার দারুণ ব্যাটিং দেখে। বাংলাদেশ আজ প্রথম উইকেট হারায় ১১ রানেই। ২ রান করে ফিরে যান এনামুল হক বিজয়। নাজমুল হোসেন শান্ত নিজের উইকেট বিলিয়ে আসেন ব্যক্তিগত ৬ রান করে। দুই অঙ্কের দেখা পাননি রানখরায় ভুগতে থাকা লিটন দাসও। তিনিও ৬ রান করেই বিদায় নেন।
বিজয়-শান্ত-লিটনরা আসা-যাওয়ার খেলায় নাম লেখালেও অপরপ্রান্তে রান তুলছিলেন সৌম্য। ৫৮ বলে ফিফটি তুলে নেন তিনি। যে ওভারে সৌম্য ফিফটি তোলেন, ওই ওভারেই দুইবার আউট হতে পারতেন তিনি। তবে একবার তাকে জীবন দেন রাচিন রবীন্দ্র ক্যাচ ছেড়ে। অন্যবার, আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। এছাড়াও ম্যাচে আরও দুইবার জীবন পান এই ওপেনার। জীবন পেয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগার স্পর্শ করেন সৌম্য। প্রথমে তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে ৩৬ রানের জুটি, পরে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে ৯১ রানের জুটি - বাংলাদেশও হাঁটতে থাকে লড়াকু স্কোরের পথে। হৃদয় এদিন রানআউট হওয়ার আগে ১২ রানের বেশি করতে পারেননি। মুশফিক সাজঘরে ফেরেন ফিফটি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে। ৪৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে। তবে ১১৬ বলে ঠিকই তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছে যান সৌম্য।
তিন জীবন পেয়ে সেঞ্চুরির পরপরই রান তোলার গতি বাড়ান সৌম্য। সেঞ্চুরি থেকে দেড় শর ঘরে যেতে তার লাগে মাত্র ২৮ বল। বলা রাখা ভালো, তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের পর তৃতীয় টাইগার ব্যাটার হিসেবে ১৫০ রানের ইনিংস খেললেন সৌম্য। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অবশ্য উইকেটে থাকা হয়নি তার। শেষ ওভারের প্রথম বলে ব্যক্তিগত ১৬৯ রান করে বিদায় নেন তিনি। এসময় স্মরণীয় ইনিংস খেলার সুবাদে অভিবাদনের সাগরে ভাসেন তিনি।
শেষের দিকে, সৌম্যর সঙ্গে অন্য কেউ হাল ধরতে পারলে সহজেই তিন শর ঘর পেরোতে পারতো বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজের ১৯, তানজিদ হাসান সাকিবের ১৩ এবং রিশাদ হোসেনের ৬ রান যথেষ্ট হয়নি তার জন্য। নিউজিল্যান্ডের হয়ে শেষ ওভারে ৩ উইকেট নেন উইলিয়াম ওরর্কি। ৩ উইকেট নেন জ্যাকব ডাফিও।