আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ইরান-পাকিস্তানের চরম উত্তেজনার মধ্যে ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আরোয়ারুল হক কাকা। পাকিস্তানে বিমান হামলা চালানোর কিছুক্ষণ আগে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছিলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির-আব্দুল্লাহিয়ান। তবে সেখানে তিনি হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে কাকারকে কোনও ইঙ্গিত দেননি।
ইরানে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। এতে নিহত হয়েছেন ৭ নারী ও শিশু। এর দিনদুয়েক আগেই পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে গভীর রাতে হামলা চালায় ইরান। এতে অন্তত দুই শিশু নিহত ও আরও তিনজন আহত হন।
এই পরিস্থিতিতে বিদেশ সফর সংক্ষিপ্ত করে তড়িঘড়ি দেশে ফিরছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকার। এছাড়া পাকিস্তানে ইরানের হামলা হওয়ার কিছুক্ষণ আগে প্রধানমন্ত্রী কাকারের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান।
তবে সেই বৈঠকেও পাকিস্তানে হামলার বিষয়ে আগে থেকে কিছুই আভাস দেয়নি তেহরান। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার কাকারের সাথে ভ্রমণকারী একজন কর্মকর্তার মতে, ইরানি শীর্ষ কূটনীতিক হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান বৈঠকের সময় তার দেশের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে কোনও কথা শেয়ার করেননি। আর সেই বৈঠক শেষে পাকিস্তানে ইরানের হামলার খবর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকার বিস্মিত হন।
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, পরিস্থিতি গুরুতর হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী কাকার সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ (বৃহস্পতিবার) পাকিস্তানে ফিরছেন। এর আগে আগামী ২২ জানুয়ারি তার ফিরে আসার কথা ছিল। তিনি বুধবার রাতেই ফিরতে চেয়েছিলেন কিন্তু ফ্লাইটের সময়সূচীর কারণে তা হয়নি। কারণ তিনি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলেন।
পাকিস্তানের এই সংবাদমাধ্যম বলছে, দাভোসে প্রধানমন্ত্রী কাকারের সাথে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পরপরই এই হামলার ঘটনা ঘটা ইসলামাবাদের কাছে একমাত্র বিস্ময়কর বিষয় নয় যে, কিছুক্ষণ আগেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক চলছিল।
আফগানিস্তানে ইরানের বিশেষ প্রতিনিধি চলতি সপ্তাহের শুরুতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানির সঙ্গে দেখা করেন। এছাড়া পাকিস্তান ও ইরানি বাহিনীর একদিনের নৌ মহড়াও গত ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়।
ইরান কেন তাড়াহুড়ো করে পাকিস্তানে হামলার মতো কাজ করল তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এই হামলার একদিন আগেই তারা ইরাক ও সিরিয়ায় হামলা করে। বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন, এই ধরনের হামলা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘর্ষের আরও প্রসার ঘটাতে পারে।
এর আগে পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর কথা স্বীকার করে ইরান। দেশটি বলছে, পাকিস্তানে হামলার লক্ষ্য ছিল ‘ইরানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’। ওই হামলায় দুই শিশু নিহত ও আরও তিনজন আহত হন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, পাকিস্তানে যে বিমান হামলায় দুই শিশু নিহত হয়েছে তা একটি ‘ইরানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে’ লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের মাটিতে হামলাটি ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের রাস্ক শহরে সাম্প্রতিক হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে করা হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, ‘গোষ্ঠীটি পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের কিছু অংশে আশ্রয় নিয়েছে। এই বিষয়ে আমরা একাধিকবার পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
তবে এই হামলার ঘটনায় পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয় এবং ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে পাকিস্তান। আর বৃহস্পতিবার সকালে ইরানে পাল্টা বিমান হামলা চালায় পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তান। এতে কমপক্ষে ৭ নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চালানো এই অভিযানের সময় বেশ কিছু সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। এছাড়া এই অভিযানকে ‘সন্ত্রাসী আস্তানাগুলোর বিরুদ্ধে অত্যন্ত সমন্বিত এবং বিশেষ লক্ষ্যবস্তুতে সামরিক হামলা’ হিসাবেও বর্ণনা করেছে মন্ত্রণালয়।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান করে পাকিস্তান। তবে আজকের এই হামলার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের নিজস্ব নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা। এটি সব কিছুর ওপরে এবং এই বিষয়ে কোনও আপস করা যায় না।’
পাকিস্তানের একটি গোয়েন্দা সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, সামরিক বিমানের মাধ্যমে এই হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমাদের বাহিনী ইরানের অভ্যন্তরে বেলুচ জঙ্গিদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।’