অবৈধ আয়ে সম্পদ অর্জন,ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মে যা বলা আছে

Date: 2024-07-11
news-banner
সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। অবৈধভাবে অর্থ-সম্পদ উপার্জন শুধু সরকারি চাকরিজীবীরাই নয়, অন্যান্য পেশার মানুষরাও রয়েছেন।

ইসলাম ধর্মে অবৈধ উপার্জনকে সম্পূর্ণ হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কুরাআনের একাধিক সূরায় আল্লাহ অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জন না করার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন, যা মেনে চলা প্রতিটি মুসলমানের কতর্ব্য।

কুরাআনে বলা হয়েছে, হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না। (সূরা নিসা- ২৯ নম্বর আয়াত)। একই বিষয়ে অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের ধন অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে ভোগ করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণকে ঘুষ হিসেবে দিও না। (সূরা বাকারা-১৮৮ নম্বর আয়াত)।

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- হে মানবকুল! তোমরা পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র বস্তু ভোগ করো। (সূরা বাকারা- ১৬৮ নম্বর আয়াত) এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা কাজী আবু হুরায়রা বলেন, কুরআনে এই বিষয়টিকে এতটাই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যে, নামাজ-রোজা, হজ-যাকাতের মতো হালাল বা সৎ পথে উপার্জন করাটাও আরেকটি ফরজ বা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য বলে হাদিস শরিফে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ হাদিসে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি পবিত্র বস্তুকেই ভালোবাসেন বা গ্রহণ করেন। কাজেই হালাল উপার্জনের সঙ্গে কারও যদি সামান্যতম হারাম উপার্জনও মিশে যায়, তাহলে তাহলে সেই ব্যক্তির ইবাদত কবুল হয় না।

ইসলাম ধর্মের মতো হিন্দু ধর্মেও অবৈধ আয়কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক ড. কুশল বরণ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বেদের অন্যতম জ্ঞানকাণ্ড ‘উপনিষদে’ এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। উপনিষদের একেবারে প্রথম মন্ত্রে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কারও সম্পদে লোভ করা যাবে না এবং ত্যাগের সাথে ভোগ করতে হবে।

এছাড়া অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনকারী ব্যক্তিরা মৃত্যুর পরেও শান্তি পাবে না বলেও জানাচ্ছেন হিন্দু ধর্মের এই পণ্ডিত।

বৌদ্ধ ও খ্রিষ্ট ধর্মেও অবৈধ আয়ের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. দীলিপ কুমার বড়ুয়া। তিনি বলেন, বৌদ্ধ ধর্মে যে পঞ্চশীল বা পাঁচটি অবশ্য পালনীয় নীতির কথা বলা হয়েছে, সেগুলোরই একটি হচ্ছে ‘অদত্ত বস্তু গ্রহণ থেকে বিরত থাকা’। অর্থ্যাৎ যা আমার প্রাপ্য নয় বা যা আমি অর্জন করিনি, সেটি নেয়া বা ভোগ করা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, যেসব কাজ অবৈধ বা যাতে কারও মানুষ বা অন্যান্য জীবের ক্ষতি হয়, সেগুলোর সবই বৌদ্ধ ধর্মে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। খ্রিষ্ট ধর্মও অবৈধ উপার্জনকে সমর্থন করে না বলে স্পষ্ট করেছেন ঢাকার কাফরুল ক্যাথলিক চার্চের ধর্ম যাজক ড. প্রশান্ত টি রিবেরু। তিনি বলেন, খ্রিষ্ট ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ বাইবেলে ঘুষের বিষয়ে সতর্ক করে সৃষ্টিকর্তা আদেশ দিয়েছেন। 

এতে বলা হয়, এবং তুমি কোনও উপহার গ্রহণ করবে না। কারণ উপহার জ্ঞানীদেরকে অন্ধ করে দেয়।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
image

Leave Your Comments