মানব সৃষ্ট ভয়াবহ বিপর্যয় ৬ ও ৯ আগষ্ট ১৯৪৫

Date: 2024-08-18
news-banner
তাৎপর্য বিবেচনায় বিষয়টি আলোচনার দাবি রাখে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট জাপানের নাগাসাকি শহরের ওপর দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর তিন দিন আগে হিরোশিমাতেও একই অবস্থা হয়। দুটি শহরে নিহতের সংখ্যা ছিল দেড় লাখের ওপরে। দুটি শহরই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। বাস্তুহারা হয়ে পড়েছিলেন লাখো মানুষ। শারীরিক আঘাত নিয়ে অনেককে বাকি জীবন কাটাতে হয়েছে প্রতিবন্ধী হয়ে।

সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক ছিলো, পারমাণবিক বোমা হামলার তেজস্ক্রিয় বিকিরণের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, সে সম্পর্কে অজ্ঞতা। সেই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে কী করতে হবে, তা না জেনে ও না বুঝে অনেকেই বিপদের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন। বিভিন্ন রোগ ও উপসর্গ নিয়ে সারা জীবন ভুগতে হয়েছে তাঁদের। তবে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়েছে যাঁরা দীর্ঘদিন বেঁচে ছিলেন। জাপানে তাঁরা ‘হিবাকুশ’ নামে পরিচিত। তাঁদের অনেকেই নিয়মিতভাবে সেই দুর্দশার কথা বর্ণনা করে গেছেন। বলেছেন, বিশ্বের কোথাও যেন আর সেই অভিশাপের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

হিবাকুশদের মধ্যে অনেকেই জীবিত আছেন এবং চরতি বছরের মার্চ মাসের শেষে তাঁদের সংখ্যা ছিল এক লাখের সামান্য বেশি এছাড়া তাঁদের গড় বয়স ৮৫ বছর।  যাঁরা এখনো সক্রিয় আছেন, তাঁরা পারমাণবিক বিশ্বের বিপদ সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করার প্রচার কাজ থেকে থেমে যাননি।

৯ আগস্টের নাগাসাকি বোমা হামলার বার্ষিকীর আগে শহরের মেয়র সুজুকি শিরো এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেছিলেন, গাজা ভূখণ্ডে চলা তাণ্ডবলীলার আলোকে এবারের বার্ষিকীতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে আমন্ত্রণ জানানো থেকে তিনি বিরত থাকবেন।

সুজুকি শিরো পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছিলেন, তাঁর সে সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক অবস্থান থেকে নয়; বরং মানবিক অবস্থান থেকে দেখা উচিত। কারণ, ইউক্রেনে চালানো আগ্রাসনের আলোকে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকেও স্মারক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো থেকে তিনি বিরত আছেন। তবে পশ্চিমা বিশ্ব মনে করে, ইসরায়েল ও রাশিয়াকে এক করে দেখার কোনো উপায় নেই।

যদিও গাজায় দেশটির অমানবিক আচরণ হচ্ছে তুলনামূলক অবস্থান থেকে অনেক বেশি বীভৎস। তবে নিজের দলের একেবারে আপনজন বলে কথা! ইসরায়েলের অমানবিক আচরণে পশ্চিমা দেশ যে কেবল চোখ বন্ধ করে নেই; বরং পেছনে ইন্ধন জুগিয়ে চলেছে নাগাসাকির ঘটনা, কিন্তু তা পরিষ্কার দেখিয়ে দিচ্ছে।

সুজুকি শিরোর বক্তব্যের ঠিক পরপরই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপান ছাড়া বিশ্বের অগ্রসর দেশগুলোর জোট জি-সেভেনের ছয়টি দেশের জাপানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতেরা সম্মিলিত ঘোষণায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে স্মারক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোয় তাঁরাও সে অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা থেকেই তাঁরা কেবল বিরত থাকেননি, সুজুকি শিরোর সিদ্ধান্তকে হেয় করার চেষ্টাও চালিয়ে গেছেন নানান ভাবে।

আরে এটাই  হচ্ছে বিশ্বের এ সময়ের কঠিনন বাস্তবতা। বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্র মুক্ত করতে হিবাকুশাদের নিরলস প্রচেষ্টা ও বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূতেরা দেখিয়ে দিলেন নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্রের সম্মানে কতটা পক্ষপাতমূলক অবস্থানে তাঁরা। এরপরও আমরা আশাবাদী কারণ, বোমা হামলার ভুক্তভোগীদের সংখ্যা কম হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা যে ঐতিহ্য রেখে যাচ্ছেন, সেই আদর্শ থেকে সরে আসা আমাদের আসন্ন বিপর্যয়কে করে তুলবে আরও বেশি অবশ্যম্ভাবী।
image

Leave Your Comments