কোন পথে হাটছে বাংলাদেশের রাজনীতি ?

Date: 2024-08-31
news-banner
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ কার্যত অনুপস্থিত৷ এর পর শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ তাদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অনেকেই আটক হয়েছেন৷ এ অবস্থায় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে টিকে থাকা আওয়ামী লীগের বর্তমান নিষ্ক্রিয়তায় রাজনীতির অঙ্গন ফাঁকা হয়ে আছে। এই শূন্য অংশ পূরণে দেশে নানান রাজনৈতিক গোষ্ঠী তৎপর।

শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পর নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। 

বিএনপির পার্টি অফিসগুলো এখন বেশ তৎপর:

রাজধানী ঢাকার পল্টন এলাকায় তাদের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবারও বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করছিলেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতারা একদিকে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘যৌক্তিক' সময় দিতে প্রস্তুত, একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি রাষ্ট্রসংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করার ব্যাপারে দ্রুতই আলোচনা চান তারা।

বিগত সরকারের আমলে তাদের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা হয়েছে অভিযোগ করে দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এসব মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান করে তাদের মামলা থেকে মুক্তির চেষ্টা চলছে বলে জানান তারা।


জামায়াতের লক্ষ্য ‘ইসলামী জোট নয়, রাজনৈতিক ঐক্য’:

বিএনপি আলোচনায় তাগাদা দিলেও তাদের দীর্ঘসময়ের মিত্র জামায়াতে ইসলামী এক্ষেত্রে ভিন্ন পন্থা নিয়েছে। তারা এই সরকারকে যথেষ্ট সময় দিতে চায়
দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। রাজনৈতিকভাবেও শক্ত অবস্থান তৈরি করতে চাইছে দলটি ৷ স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, ইসলামি দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছে তারা। 

বলা হচ্ছে, দলটি চাইছে যেসব এলাকায় যেসব ইসলামি সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ভালো, সেসব এলাকায় ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে আসা। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে কয়েকটি ইসলামি দলের নেতাদের সঙ্গে জামায়াতের আমিরের বৈঠক হয়েছে।

এদিকে, গত বুধবার জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

শিক্ষার্থীরা চান ‘নন-বাইনারি’ ব্যবস্থা:

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের কঠিন প্রতিরোধে টিকতে পারেনি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার ৷ শিক্ষার্থীরা একটি রাজনৈতিক দল করতে পারেন, এই খবর বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনায়৷ সে বিষয়টি বড় রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে দেখছে?

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ছাত্ররা যদি রাজনৈতিক দল করতে চায়, এটা তাদের অধিকার, আমরা স্বাগত জানাই৷ গণতন্ত্র তো মাল্টি পার্টি সিস্টেম ৷ এখানে শত ফুল ফুটতে দিতে হবে ৷

একই কথা বলেন ‘কিংমেকার' পার্টি খ্যাত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও৷ তিনি বলেন, ছাত্ররা দল করলে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে শিক্ষার্থীদের দুই সমন্বয়ক রয়েছেন বলে উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, তবে সরকারে থেকে রাজনৈতিক দল গড়লে তা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না৷

কবে হবে নির্বাচনের রোডম্যাপ:

সম্প্রতি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ সেখানে তিনি রাষ্ট্র সংস্কারের কয়েকটি দিক নির্দেশনা উল্লেখ করলেও নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে পরিষ্কার কোনো পরিকল্পনা তুলে ধরেননি৷ তিনি সবাইকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানান৷

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার প্রশাসনকে চরম দলীয়করণ করার ফলে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন বৈষম্যের  শিকার হয়েছেন। আমরা ইতোমধ্যে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আরম্ভ করেছি। তবে প্রশাসনকে গতিশীল রাখতে এবং একইসঙ্গে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সময় প্রয়োজন। সেজন্য সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রশাসনের সব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন জনগণের আস্থা ফিরে পায় সেটি আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য সামিনা লুৎফা বলেন,  অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটু পরিষ্কার করে বলা উচিত আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে জুলাই হত্যাকাণ্ডে নিহত ও আহতদের একটি তথ্যভাণ্ডার করা, বিচারের বিষয়গুলোতে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেগুলো বলা৷

স্বল্পমেয়াদে অর্থনীতিকে কেমন করে সামাল দেয়া হবে, এগুলো পরিষ্কার করে বলে এরপর দীর্ঘমেয়াদী বিষয়গুলো তুলে ধরা উচিত বলে মনে করেনতিনি।

তার মতে, এই বিষয়গুলো যদি বর্তমান সরকার পরিষ্কারভাবে জানান তাহলে সবগুলো রাজনৈতিক দল আস্থা পাবে এবং মূল রাজনৈতিক শক্তিগুলোর বাইরেও যেসব রাজনৈতিক দল প্রতিক্রিয়াশীল নয় তারাও সময় ও সুযোগ পাবে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার৷
image

Leave Your Comments