বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সেই ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি কি.?

Date: 2024-09-05
news-banner
 একটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় কেন ভিন্ন ভিন্ন আইনে চলবে, সেই প্রশ্নও এখন সামনে আনা জরুরি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ ভূখণ্ডের জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রতীকের দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এখান থেকে শুরু হওয়া বিদ্রোহ গত ৭৮ বছরে এ ভূখণ্ডের ইতিহাসের গতিপথ বার বার করে পাল্টে দিয়েছে।

কিন্তু এখন পর্যন্ত কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় সৃজনশীল জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলা গেছে.? অর্থাৎ চাকরির জন্য প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার কথা চিন্তাও করেননি নীতিনির্ধারকেরা।

একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা শনৈঃশনৈঃ করে বাড়লেও জ্ঞান উৎপাদন ও গবেষণায় বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃত অর্থে বিশ্ববিদ্যালয় বলা যাবে কি? প্রশ্ন হলো, তাহলে কেন একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে?

আমাদের সমাজে উচ্চশিক্ষার চাহিদা ক্রমাগতভাবে বেড়েছে। কুয়ালালামপুরের মোনাশ ইউনিভার্সিটির উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক ড. নিয়াজ আসাদুল্লাহর গবেষণা জানাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় যেতেন মাত্র ২ শতাংশ শিক্ষার্থী। এই সংখ্যাকে দুই অঙ্ক, মানে দশের ঘরে নিয়ে যেতে সময় লেগেছে পাক্কা ৩৮ বছর। 

২০১০ থেকে ২০২০—এ ১০ বছরে উচ্চশিক্ষায় যাওয়া শিক্ষার্থীর অনুপাত ১০ থেকে বেড়ে ২০-এ গিয়ে পৌঁছেছে।

এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণের পেছনে মূলত ব্যবসার চিন্তাটা প্রধানভাবে ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়বেন, তাঁরা কী শিখবেন, তাঁদের কর্মসংস্থান কী হবে—এসব বিষয় বিবেচনায় না নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। সরকারি খাতে বিশ্ববিদ্যালয় মানে অবকাঠামো খাতে শত শত কোটি টাকার কর্মযজ্ঞ। আর বেসরকারি খাতে বিশ্ববিদ্যালয় মানে টিউশন ফি।

ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি ব্রিটিশরা যখন কলকাতায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল, এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য সিভিল সার্ভেন্ট তৈরি করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূলেও ছিল সেই একই চিন্তা। পাকিস্তান আমলের ২৪ বছর এবং বাংলাদেশ পর্বের ৫৩ বছরেও আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সেই ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসনিক দায়িত্বে তাঁদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধার ব্যবধান বিস্তর। এ ধরনের অতিরিক্ত সুবিধা একজন সাধারণ অধ্যাপক থেকে একজন উপাচার্যকে কার্যত খুব শক্তিশালী করে তোলে। তার মধ্যে একটা স্বৈরাচারী মনোবৃত্তি ও দম্ভ তৈরি করে।

অন্তত একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে মডেল হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরুটা যেখানে সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই উচ্চশিক্ষার সংস্কার যাত্রা সূচনা হওয়া উচিৎ।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তিন আইনে চলে। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর—এই চার বিশ্ববিদ্যালয় চলে ’৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী। ষাটের দশকে পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের স্বাধীনতা কেড়ে নেন। এর প্রতিবাদে এক দশকের বেশি সময় ধরে শিক্ষকেরা আন্দোলন করেছিলেন। এই আন্দোলনের ফসল হিসেবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ’৭৩-এর অধ্যাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একাডেমিক স্বাধীনতা দেওয়া হয়।
image

Leave Your Comments