প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ শবে কদর পালন করছে। লাইলাতুল কদর, যা আল কুরআন মাজিদে ‘শবে কদর’ নামে পরিচিত, পবিত্র মাস রমজানের শেষ দশ দিনের অন্যতম এক শুভ রাত্রি, যা বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানে ভরপুর। এটি হল সেই রাত, যখন প্রথমবার আল কুরআন নাজিল হয়েছিল প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উপর। শবে কদর যে রাতে আসে, তা ইসলামের দৃষ্টিতে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।
শবে কদর সম্পর্কে কুরআনে উল্লেখ রয়েছে: “শবে কদর হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।” (সুরা কদর: ৩)
এ রাতের বরকত, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সুযোগ গ্রহণ করতে বিশ্বের মুসলিমরা নফল ইবাদত, তাহাজ্জুদ নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও ইস্তিগফার করার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও মাগফিরাত কামনা করে থাকে। শবে কদর কেবল এক রাতের জন্য নয়, বরং এর প্রভাব সারা বছরই মুমিনদের জীবনে বজায় থাকে।
শবে কদর মুসলিমদের জন্য এক বিশাল সৌভাগ্যের রাত। এ রাতে আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের বিশেষভাবে ক্ষমা করেন, তাদের গুনাহ মাফ করেন এবং তারা যদি সত্যিকারের আন্তরিকতা নিয়ে দোয়া করে, তবে তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।
শবে কদরের রাত চাঁদ ওঠার পর থেকে সকাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়, তবে ঐতিহ্যগতভাবে ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ রাত্রি বিশেষভাবে পালিত হয়। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে, রমজানের শেষ দশ রাতের যেকোনো এক রাতে শবে কদর হয়ে থাকে, তাই সকল মুসলিম রমজানের এই শেষ দশ দিন ইবাদতের মধ্যে কাটানোর চেষ্টা করেন।
মুসলিমদের প্রতি আহ্বান, এই রাতে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের জন্য আরও বেশি করে দোয়া-ইবাদত করুন, পরকালের মুক্তি ও শান্তির জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এ রাতটি আমাদের সকলের জন্য একটি বড় সুযোগ, যা এক জীবনে বারবার আসে না।
শবে কদর: আল্লাহর রহমতের অবারিত দাওয়াত
শবে কদর ইসলামিক ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতময় রাতগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি এমন একটি রাত, যা মুসলিমদের জন্য অফুরান রহমত ও মাগফিরাত লাভের একটি বিশেষ সুযোগ। পবিত্র কুরআনের সুরা কদরে এই রাতের মাহাত্ম্য তুলে ধরা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, এ রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি এই রাতটি ইবাদতে অতিবাহিত করবে, তার আমল হাজার মাসের তুলনায় বেশি ফজিলত ও পুরস্কৃত হবে।
কেন শবে কদর বিশেষ?
শবে কদরের রাতে আল্লাহপাক প্রথমবারের মতো কুরআন শরিফ নাজিল করেন, যা মুসলিম জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই রাতে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের ক্ষমা করেন, গুনাহ মাফ করেন এবং তাদের দোয়া কবুল করেন। এটি সেই রাত, যখন ফেরেশতারা পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং সারা রাত একে অপরকে আল্লাহর মহিমা গাইতে থাকেন।
শবে কদরের রাতটির পবিত্রতা ও গুণাবলী কুরআনে এইভাবে বর্ণিত হয়েছে:
“শবে কদর হল হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। ওই রাতে ফেরেশতারা এবং রুহ (যিব্রাইল আ.) আল্লাহর অনুমতিক্রমে প্রতিটি নির্দেশ নিয়ে নামেন। রাতটি শান্তিপূর্ণ, যা ফজর না ওঠা পর্যন্ত থাকে।” (সুরা কদর: ৩-৫)
শবে কদরের আমল
শবে কদরের রাতে মুসলিমরা বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া ও তাওবা করে থাকেন। এই রাতে বিশেষ কিছু আমল করা যেতে পারে, যেমন:
তাহাজ্জুদ নামাজ: শবে কদরের রাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো তাহাজ্জুদ নামাজ। এই রাতে যারা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন, তাদের জন্য আল্লাহপাক বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন।
কুরআন তিলাওয়াত: শবে কদর থেকে মোমিনদের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভের আশ্বাস পাওয়া যায়।
দোয়া ও ইস্তিগফার: আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করা এবং সমস্ত গুনাহ মাফ করার জন্য দোয়া করা উচিত। এই রাতে আল্লাহ তাআলা দয়ালু ও মাফকারী। তিনি তার বান্দাদের দোয়া গ্রহণ করেন এবং তাদের জন্য শান্তি ও সাফল্য বর্ষণ করেন।
তাওবা ও সৎকাজ: শবে কদর রাতে বিশেষভাবে তাওবা করতে হবে এবং পাপ থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহর সামনে নিজেকে সৎভাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে তার রহমত লাভের সুযোগ বাড়ানো যায়।
বিশেষ দোয়া
মুসলিমরা শবে কদর রাতে বিশেষ দোয়া পাঠ করে থাকেন। অনেকেই নফল নামাজ শেষে বা কুরআন তিলাওয়াতের পর ‘اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني’ (আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফু তুহিব্বুল আফু ফাআফু আন্নি) দোয়া পাঠ করে থাকেন, যার অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি অতি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও।”
এ রাতের অমূল্য বার্তা
শবে কদর শুধু একটি রাত নয়, এটি মুসলিমদের জন্য জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলির মধ্যে একটি। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর নিকট ফিরে আসতে পারি এবং তার রহমত ও মাগফিরাত লাভ করতে পারি। এটি একটি সুযোগ, যাতে আমরা নিজেদের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারি এবং আমাদের পরকালকে উন্নত করতে পারি।
মুসলিম উম্মাহকে শবে কদর উপলক্ষে আহ্বান জানানো হচ্ছে, তারা যেন এই রাতে আরও বেশি ইবাদত, দোয়া ও তাওবায় মগ্ন হয়ে আল্লাহর কাছ থেকে পূর্ণ মাগফিরাত লাভ করেন। এই রাতের বরকত আমাদের জীবনের পথে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠুক এবং আমরা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হই।
অবশেষে, এই রাতের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে একে অপরকে ক্ষমা করে দেওয়ার এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। শবে কদর আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি দয়া ও মাপের রাত, যাতে আমরা পরবর্তী জীবনে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।