২০২২ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে আমেরিকার অন্যতম বৃহত্তম ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসালটেটিভ গ্রুপ ‘দ্য ট্রিলিয়ন ডলার প্রাইজ’ শিরোনামে বাংলাদেশের ওপর বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০১৬-২১ এই সময়ে বাংলাদেশের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা তার তুলনীয় দেশ ভিয়েতনাম, ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে অনেক বেশি ভালো করেছে। এই প্রবৃদ্ধির হার নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড়ের চেয়ে দুই গুণ বেশি এবং বিশ্বের গড় হারের (২ দশমিক ৯ শতাংশ) চেয়ে অনেক বেশি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে ভোক্তাদের আশাবাদ, ভোগ বৃদ্ধি, তরুণ শ্রমশক্তি, উচ্চ অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা, ডিজিটাল গতিবেগ, সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি, ব্যক্তি খাতে দ্রুত ব্যয় বৃদ্ধি, দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো অভ্যন্তরীণ ভোক্তা বাজার।হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) গ্লোবাল রিসার্চ বলছে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার। এর মধ্যে মধ্য ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা ২০২০ সালের ১ কোটি ৯০ লাখ থেকে ২০২৫ সালে তা ৩ কোটি ৪০ লাখে দাঁড়াবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৭ শতাংশ এখনো বিশ্বাস করে, আগামী প্রজন্ম বর্তমান প্রজন্মের চাইতে অধিকতর ভালোভাবে জীবন কাটাবে। দেশে এখন মোট শ্রমশক্তির ১১ কোটি ৪০ লাখ তরুণ এবং জনসংখ্যার মধ্যম বয়স ২৮। সমসাময়িক তুলনীয় অর্থনীতির মধ্যে সরকারি ঋণ সবচেয়ে কম, যা মাত্র জিডিপির ১৯ শতাংশ।
তাছাড়া দেশে এখন ডিজিটাল রূপান্তর চলমান রয়েছে এবং মোবাইল ব্যবহারকারী ১৭৭ মিলিয়ন। বিগত ১০ বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার বেড়ে হয়েছে ৭০ শতাংশ। ২০১৯ সালে ডিজিটাল অর্থনীতির আকার ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২২ সালে তা ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে পরিণত হয়েছে। সরকারও অর্থনীতির জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। বিগত দশকে সরকারি ব্যয় তিন গুণ বেড়েছে। বিকাশ এখন বিশ্বের শীর্ষ মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। ৬ লাখ ৫০ হাজারের বেশি ফ্রিল্যান্সারের বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অনলাইন শ্রমিকের সরবরাহকারী (বিশ্বের মোট ফ্রিল্যান্সারের ১৫ শতাংশ)। দেশে ফেসবুকে এখন ৫০ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি যদি ১০ শতাংশ হারে বাড়ে, তাহলে ২০৩০ সালে ৫ শতাংশ হারে বাড়লে ২০৪০ সালে ট্রিলিয়ন ডলারের বড় ইকোনমিতে পরিণত হবে। বর্তমান হারেও যদি বাড়তে থাকে ২০৪০ সালের আগেই (২০৩৫) ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে। একটা বিষয় দেখা গেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম সহনশীল অর্থনীতির একটি। ২০০৭-০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের সময় বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ—যা ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ ও বিশ্বের গড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি ছিল। করোনার সময়েও দেখা গেছে ২০১৯-২০-এ বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, যেখানে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই এই হার ছিল নেতিবাচক।