নিজস্ব প্রতিবেদনঃ শুধু কঠোর পরিশ্রম করলেই সফল হবেন তা কিন্তু না। পরিশ্রম কোথায়, কখন, কতটুকু, কিভাবে করবেন তাও মাথায় রাখতে হবে। জীবনে সফলতার ফল পেতে হলে পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। কোনো মানুষই পৃথিবীতে সৌভাগ্য নিয়ে জন্মায় না। নিজের ভাগ্য গড়ে নিতে হবে কর্মের মাধ্যমে। পরিশ্রমই সফলতা বয়ে আনে। নিষ্ঠা, একাগ্রতা, উদ্যম, আন্তরিক প্রচেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই নিজের ভাগ্যের পবির্তন করতে হয়। তাই বলা হয় পরিশ্রমই সৌভাগ্যের একমাত্র চাবিকাঠি। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়। পরিশ্রম ছাড়া কেউ কখনো তার ভাগ্যকে গড়ে তুলতে পারেনি এবং পারবেও না। কঠোর পরিশ্রমই হলো উন্নতির চালিকাশক্তি। যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি তত বেশি উন্নত। যে কাজ একবার শুরু করবেন, তা নিয়ে দ্বিধান্বিত না হয়ে সফল হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রখর ইচ্ছা আর পরিশ্রম দিয়ে সেই কাজ করে যান। জয় নিশ্চিত। শুধু প্রতিভা থাকলে হবে না, সেটাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে।খরগোশ আর কচ্ছপের আমরা সবাই গল্প জানি। কচ্ছপ একটুও আলসেমি করেনি বলেই সে জিতে যায়।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মস্থলে, পেশাজীবনে, খেলাধুলায় সব জায়গায় অনেক প্রতিভাবান লোকের দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু প্রতিভা দিয়েই সব হয় না। সফলতার জন্য যেটা প্রয়োজন তা হলো একাগ্রতা, প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রম। বড় কিছু অর্জনের জন্য যতটা সম্ভব দৃঢ়তার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করে যান। সাফল্য এসে আপনার দরজায় কড়া নাড়বে, জয় আপনারই হবে।
নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন। আত্মবিশ্বাস ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা আশা করা যায় না। বলা হয়, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে শুরু করা মানেই হলো অর্ধেক কাজ শেষ করে ফেলা। আত্মবিশ্বাস মানে নিজেকে চেনা। নিজের সৃজনশীলতার ওপর আস্থা রাখা। দৈনন্দিন ও প্রত্যাহিক জীবনে আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করা। নিজের বন্ধু আর পরিবারকে সবসময় কাছে রাখবেন। তারাই আপনার পথচলা পরিপূর্ণ করে তুলতে পারেন। ভালো সময়গুলো তাদের সঙ্গে উদযাপন করুন। আর কঠিন সময়গুলোয় পরিবার আর বন্ধুদের পরামর্শ নিন। নিজের বিশ্বাসের ওপর আস্থা রাখুন।
যে কাজটি করবেন সে বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ী হতে হবে। কাজটি সম্পর্কে আপনার সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন ‘হে নবী! আপনি বলে দিন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?’ উত্তর- না কোনো ক্ষেত্রেই সমান হতে পারে না। তাই আপনাকে সাধারণ জ্ঞান, মৌলিক আদর্শের জ্ঞানসহ পেশার জ্ঞান সম্পর্কে শ্রেষ্ঠত্ব বা উত্তমদের কাতারে শামিল হতে হবে। আপনি যে বিষয়েই পড়াশোনা করেন আপনাকে যথাযথভাবে সেই পেশার জ্ঞানার্জন করতে হবে। জ্ঞানকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর জন্য যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় আপনাকে আয়ত্ত করতে হবে। তাহলে আপনার পথচলা সুদৃঢ় ও পদঙ্খলন মুক্ত হবে। জ্ঞানের ব্যাপ্তি ও গভীরতা থাকা আপনার জন্য এটা আবশ্যক।
সাহসিকতা একটি উত্তম গুণ। যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ সম্পাদনের জন্য যথেষ্ট সাহসিকতার প্রয়োজন রয়েছে। আপনার মধ্যে অদম্য সাহস ও সুদৃঢ় আত্মপ্রত্যয় থাকতে হবে। আপনাকে নতুন প্রযুক্তি ও ধ্যানধারণা প্রয়োগের ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। পর্যাপ্ত সাহস, মনোবল ও আত্মপ্রত্যয় থাকলে আপনার পক্ষে যে কোনো পরিবেশ-পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
ছাত্রজীবন কিংবা চাকরিজীবনে যে কোনো কাজে সফলতার জন্য চাই আন্তরিক প্রচেষ্টা ও একাগ্রতা। নতুন প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো কোনো সহজ কাজ নয়। যে কোনো উদ্যোক্তাই কঠিন সময়েও কাজ করে যাওয়ার প্রবল মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যায় এবং মাঝে মাঝে সে বড় কিছু করে ফেলে। যারা সিরিয়াস তারা যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত থাকে, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন। একটি বিষয়ে তারা ধাপে ধাপে এগিয়ে যায়, তারা কখনো একসঙ্গে সবকিছু করতে গিয়ে ঝামেলা তৈরি করে না।
সুতরাং যাই করুন, সেই কাজের প্রতি অবশ্যই আন্তরিক হতে হবে। আন্তরিকতার সঙ্গে পরিচালনা করলে কাজের অগ্রগতি হয়। তাই কাজের প্রতি আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন।
সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তাই সময়ের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। সময়ের কাজ সময়ের মধ্যে শেষ করে ফেলতে চেষ্টা করুন। অহেতুক কাজ জমিয়ে পরবর্তী সময়ে সেগুলো একসঙ্গে করতে গেলে হিমশিম খেতে হয়। যেখানে যে সময়ে যাওয়া প্রয়োজন ঠিক সেই সময়ে উপস্থিত হোন। দেরিতে উপস্থিত হয়ে নিজে বিব্রত হবেন না, অন্যদের বিরক্ত করবেন না। সময়কে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, সময়কে ব্যবহার করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। সর্বদাই সময়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে এবং সময়ের মূল্য দিতে হবে। এজন্য তরুণদের মধ্যে সময় সচেতনতা দায়িত্ববোধ থাকা প্রয়োজন।
সবসময় কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কাজের রুটিন তৈরি করতে হবে। কোন কাজ, কখন, কীভাবে করবেন তার জন্য তালিকা তৈরি করে নিন। অগোছালো কাজ কারো পছন্দ নয়। তাই যতটা সম্ভব গুছিয়ে কাজ করুন। এতে আপনার কর্ম পরিবেশ সুন্দর হবে, কর্মস্পৃহা বাড়বে। বছরের শুরুতেই একটি বা দুটি ক্ষেত্র বেছে নিন, যেগুলোর প্রতি সারা বছর বিশেষ মনোযোগ রাখতে পারবেন।
সফলতার পূর্বশর্ত হচ্ছে উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত কাজটি করা। আপনার করণীয় কাজগুলোকে গুরুত্বের ক্রমানুসারে সম্পন্ন করুন। প্রতিদিন সকালে কাজের একটা তালিকা করুন, তারপর গুরুত্বের ক্রমানুসারে সাজান। প্রতিটি কাজ করতে কতক্ষণ সময় লাগতে পারে সেই অনুযায়ী পাশে বরাদ্দ সময় লিখুন। নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে কাজ করতে শিখুন এবং কাজ শুরু করুন। কারণ আপনার কাজের যদি কোনো টাইমলাইন বা সময়সীমা বেঁধে দেয়া না থাকে, তাহলে কখনো আপনি এটা সম্পন্ন করতে পারবেন না। তারপর ক্রমানুসারে কাজ শেষ করুন। দেখবেন আপনার সব কাজ সঠিকভাবে সঠিক সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। সফলতার জন্য দক্ষতার উন্নয়ন প্রয়োজন। কিন্তু দক্ষতা বিষয়টি অনেক ব্যাপক এবং একটি দক্ষতা আরেকটি দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। আপনি শুধু একটি বা দুটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করলে সাফল্য লাভ করবেন, এটা মনে করা ঠিক নয়। সাফল্য লাভ করার জন্য যত বেশি দক্ষতা অর্জন করা যায়, ততই ভালো। আর এজন্য প্রয়োজন বেশি বেশি কাজ করা।
কাজকে বোঝা মনে না করে সহজভাবে গ্রহণ করুন। কাজের চাপ কমানো এক দিনের অনুশীলন নয়। আসলে কাজের চাপ আছে, না কি শুধু শুধু ঘাবড়ে যাচ্ছেন! বিষয়টি নিয়ে ভাবুন! মনে মনে ভাবছেন, যদি কাজটা ঠিকমতো না হয়! যদি ভুল হয়! সুতরাং কোনোরকম চাপ মনে না করে বারবার চেষ্টা করুন।