এ অভিযোগে সবশেষ তিনটি শিপিং লাইন কোম্পানির নাম উঠে এসেছে। তবে সন্ধান করতে নেমে শেষ পর্যন্ত এদের কারও অস্তিত্বের খোঁজ মেলেনি। শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানতে পারে ওই ৩টি শিপিং এজেন্ট প্রতিষ্ঠান তাদের সদস্যভুক্ত নয়। ইন্টারনেটেও এদের তথ্য খুঁজে পায়নি কাস্টমস। ওদিকে রপ্তানি জালিয়াতির অভিযোগ পেয়ে পৃথকভাবে আরও ৫ শিপিং কোম্পানির নাম জানতে পেরেছে কেন্দ্রীয়। এদের মধ্যে চারটিরই কোনো নিবন্ধন নেই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বা শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।এনবিআর সূত্রের দাবি, কিছু জালিয়াত চক্র কাগুজে কোম্পানি খুলে দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে এসব জালিয়াতি করে যাচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, সম্প্রতি ভুয়া রপ্তানির নামে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ৩০টি ভুয়া রপ্তানি পণ্য চালানের বিল অব ল্যাডিংয়ে সবশেষ আলোচিত ৩টি শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারের নাম উল্লেখ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—‘ওশান ফ্রেইট সিস্টেম, অ্যাভারেস্ট গ্লোবাল লজিস্টিকস ও গ্রিন ভিউ লজিস্টিকস।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠির ভিত্তিতে সম্প্রতি এনবিআর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কাছে যে ৫ শিপিং এজেন্টের হালনাগাদ তথ্য পাঠাতে বলেছে, সেই শিপিং এজেন্টগুলো হলো—‘ওয়ান কার্গো লিমিটেড, ফেমাস শিপিং লাইন লিমিটেড, এমআর কনটেইনার লাইন, অ্যাভারেস্ট গ্লোবাল লজিস্টিক ও ওশান ফ্রেইট সিস্টেম। এর মধ্যে ওয়ান কার্গো ছাড়া বাকি কোনো প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেই বলে জানিয়েছ চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে কীভাবে লাইসেন্স ছাড়া কাজ করছে এসব প্রতিষ্ঠান।এসব শিপিং এজেন্টের তথ্য চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার বলেন, সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তখন তদন্তের জন্য তথ্য জানতে চাওয়া হয়।
রপ্তানি বাণিজ্যে জালিয়াতি বন্ধে এই পাঁচ শিপিং এজেন্টের বিষয়েও হালনাগাদ তথ্য চাইতে হয়েছে। কিন্তু আমাদের কথা হলো, লাইসেন্স ছাড়া তো কোনো শিপিং কোম্পানির কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সুযোগই থাকার কথা নয়। এর মানে হচ্ছে, যারা কাজ করছে বা করার সুযোগ পাচ্ছে—তা প্রতারণার মাধ্যমে অনেকটা ম্যানেজ ফর্মুলার ভিত্তিতেই করছে।কাগুজে এসব কোম্পানি মূলত রপ্তানি জালিয়াতি চক্রের যোগসাজশে অনিয়ম করে বিদেশে অর্থও পাচার করে থাকতে পারে। তবে এমন ভুয়া শিপিং এজেন্টদের দৌরাত্ম্য বন্ধে যেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নতুন নীতিমালাও করেছে, তাই বিষয়টি এনবিআরকেই গভীরভাবে খতিয়ে দেখা দরকার।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের যেখানে যা করণীয় তা করবে বলেও জানান তিনি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়শনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, লাইসেন্স ছাড়া শিপিং এজেন্ট হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, কাস্টম এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে আমাদের অনুমতি নিতে হয়। আর এ ধরনের কাজ যারা করছে সেটা স্রেফ প্রতারণা। কারণ, কেউ যদি বলে তার শিপিং কোম্পানি আছে কারও তো কিছু করার নেই। এতে যদিও শিপিংয়ের বদনাম হচ্ছে। শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা প্রায় পাঁচশ। এদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো লাইসেন্স নবায়ন করেনি, আবার কেউ ব্যবসাতেই নেই। যখন কাস্টম হাউস থেকে বিভিন্ন শিপিং কোম্পানির তথ্য জানতে চাওয়া হয়, তখন এমন সব নাম উঠে আসে, যেখানে ওই কোম্পানির নাম আদৌও কোনোদিন শুনিনি।