সাইবার হামলা; ইরানজুড়ে পেট্রোল স্টেশন অচল

Date: 2023-12-18
news-banner
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ইরানের সরকারি একটি টেলিভিশনকে দেশটির তেল মন্ত্রী ওজি বলেছেন, ইরানের প্রায় ৭০ শতাংশ পেট্রোল স্টেশনের পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটেছে। দেশের বাইরের হস্তক্ষেপের কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে বলা হয়েছে, প্রিডেটরি স্প্যারো নামের একটি গ্রুপ ইরানে সাইবার হামলা চালানোর দাবি করেছে। ইসরায়েলের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরেও প্রিডেটরি স্প্যারোর এই দাবির তথ্য জানানো হয়েছে।

এক বিবৃতিতে ইরানে সাইবার হামলার দায় স্বীকার করে  প্রিডেটরি স্প্যারো বলেছে, ‘‘জরুরি পরিষেবাগুলোর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে এই সাইবার আক্রমণ করা হয়েছে।’’

ইরানের সাইবার নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে দেশটির বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা। তারা বলেছে, ‘‘এই ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। পেট্রোল পরিষেবায় ব্যাঘাতের সম্ভাব্য সব কারণ বিবেচনায় নিয়ে এই তদন্ত করা হচ্ছে।’’

ওই হ্যাকার গোষ্ঠীটি অতীতেও ইরানের পেট্রোল স্টেশন, রেলওয়ে এবং ইস্পাত কারখানার নেটওয়ার্কে সাইবার হামলার দাবি করেছিল বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। তবে ২০২১ সালের পর এবারই প্রথম ইরানজুড়ে পেট্রোল নেটওয়ার্কে এই ধরনের সাইবার হামলা চালানো হয়েছে। ওই বছর সাইবার হামলা চালিয়ে ইরানের পেট্রোল বিক্রির বিভিন্ন সংস্থার আন্তঃসংযুক্ত নেটওয়ার্ককে বিকল করে দেওয়া হয়।

এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশটির মোটর গাড়ি চালকেরা সরকারের ইস্যু করা স্মার্ট কার্ড দিয়ে হ্রাসকৃত মূল্যে পেট্রোল কিনতে পারতেন। যে কারণে ভর্তুকি মূল্যে জ্বালানি কেনার জন্য দেশটির পেট্রোল স্টেশনগুলোতে দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছিল সেই সময়। ইরান ওই হামলার জন্য ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে।

সোমবার সকালের দিকে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে পেট্রোল স্টেশনগুলো বিকল হয়ে যাওয়ার খবর আসতে শুরু করে। বিশেষ করে তেহরানে পেট্রোল সরবরাহে ভয়াবহ ব্যাঘাত ঘটে। দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে, অনেক পেট্রোল স্টেশন ম্যানুয়ালি কাজ করতে বাধ্য হয়েছে।

দেশটির তেল মন্ত্রী ওজি, মাত্র ৩০ শতাংশ স্টেশন সচল রয়েছে। বাকিগুলো ধীরে ধীরে পরিষেবায় যে বিঘ্ন ঘটেছে, তার সমাধান করছে। ইরানের পেট্রোল স্টেশন অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র রেজা নাভার দেশটির আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফারস নিউজকে বলেছেন, সফ্টওয়্যার সমস্যার কারণে পেট্রোল পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশজুড়ে কিছু স্টেশনে জ্বালানি বিতরণ ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সফ্টওয়্যারে সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এই সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করেছেন।

তবে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির পরিকল্পনার সাথে এই ব্যাঘাতের কোনও সম্পর্ক নেই বলে ইরানের গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে। এর আগে, ২০১৯ সালে ইরানের সরকার জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ার পর দেশতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। যা শেষ পর্যন্ত ভয়াবহ সহিংস রূপ ধারণ করে। এতে কয়েকশ মানুষের প্রাণহানি ঘটে বলে বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে সেই সময় দাবি করা হয়।

ইরানের সরকারি টেলিভিশন বলছে, পেট্রোল স্টেশনগুলো ম্যানুয়ালি জ্বালানি সরবরাহ করতে চাইছে। এই সমস্যার সমাধানে কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। এদিকে, ইরান অভিযোগ করলেও ইসরায়েল এই সাইবার হামলার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেনি।

সূত্র: রয়টার্স, এএফপি।
image

Leave Your Comments