আন্তর্জতিক ডেস্কঃ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভোট টানা তৃতীয় দিনের মতো স্থগিত করা হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার (২০ ডিসেম্বর) এই ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
এর আগে গত সোমবার ও মঙ্গলবার প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ভোটাভুটি স্থগিত করা হয়। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রাণ বিতরণের জন্য গাজায় সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাবের ওপর বুধবার ভোটাভুটি হওয়ার কথা থাকলেও টানা তৃতীয় দিনের মতো তা স্থগিত করা হয়েছে।
টানা তিনদিন এই ভোটাভুটি বিলম্বিত হওয়ার পর এখন বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য এই খসড়া প্রস্তাবের ওপর ভোট দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত সোমবার এই প্রস্তাবের ওপর প্রথম দফায় ভোটাভুটি স্থগিত করা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের উত্থাপিত এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘গাজায় তাৎক্ষণিকভাবে সব হামলা বন্ধ করতে হবে, বন্দিদের বিনা শর্তে মুক্তি দিতে হবে এবং গাজার সাধারণ মানুষের কাছে বিপুল ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’
আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সংঘাতের সকল পক্ষকে অবশ্যই তাদের বাধ্যবাধকতা মেনে চলার কথা উল্লেখ করে এই প্রস্তাবে জাতিসংঘের একটি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা দ্রুত কার্যকর করারও অনুরোধ করা হয়েছে।
গত সোমবার এই প্রস্তাবের ওপর ভোট প্রথমবার স্থগিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র যেন নতুন করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো না দেয়— সেজন্য নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য দেশগুলোর কূটনীতিকরা সেদিন মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
আর মঙ্গলবারও দ্বিতীয়বারের মতো এই ভোটাভুটি স্থগিত করা হয়। বুধবার ভোট হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। মূলত যুক্তরাষ্ট্র এখনও এই খসড়া রেজোলিউশনের বিষয়ে আশ্বস্ত হতে পারেনি।
এর আগে গত গত ৯ ডিসেম্বর গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হয়। কিন্তু সেটিতে সঙ্গে সঙ্গে ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এতে ইসরায়েল খুশি হলেও; বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো মার্কিনিদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেই ভেটোর পর গাজায় বর্বরতা আরও বৃদ্ধি করে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো যুদ্ধবিরতির পক্ষে সরব হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বুধবার বলেছেন, হামাসকে ‘নির্মূল’ না করা পর্যন্ত গাজায় কোনও যুদ্ধবিরতি হবে না। কিন্তু রাশিয়া এবং আরব লীগ মরক্কোতে রাশিয়ান-আরব সহযোগিতা ফোরাম থেকে যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরপর থেকে টানা আড়াই মাস ধরে গাজায় আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি এই আগ্রাসনের নিহত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ১৪ হাজারেরও বেশি নারী ও শিশু। এছাড়া হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৫২ হাজারের বেশি মানুষ।