আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ইউক্রেনের সাথে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধে অংশগ্রহণের ডাক পড়তে পারে আশঙ্কায় লাখ লাখ রুশ নাগরিক দেশ ছেড়েছেন। যে কারণে চলতি বছরে দেশটিতে প্রায় ৪৮ লাখ শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। আগামী বছর শ্রমিকের এই সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে রাশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট অব ইকোনোমিকসের নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
রোববার রুশ বিশেষজ্ঞ এবং ওই গবেষণার বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদপত্র ইজভেস্তিয়ার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এলভিরা নাবিউলিনা গত মাসে বলেছিলেন, রাশিয়ার ক্ষয়প্রাপ্ত শ্রমশক্তি তীব্র শ্রমিক ঘাটতি তৈরি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে হুমকির মুখে ফেলছে। কারণ মস্কো সামরিক ও আর্থিক শক্তিকে জোরদার করছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে দেশটির লাখ লাখ নাগরিক বিদেশে চলে গেছেন। যাদের মধ্যে অনেক উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন আইটি বিশেষজ্ঞও রয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ অথবা যুদ্ধে অংশ নেওয়ার ডাক পাওয়ার আশঙ্কায় তারা দেশ ছেড়েছেন বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চলতি মাসের শুরুর দিকে দেশটিতে বেকারত্বের হার ঐতিহাসিক ২ দশমিক ৯ শতাংশ সর্বনিম্ন বলে এর প্রশংসা করেছিলেন। যদিও তার এই ঘোষণা গত সেপ্টেম্বরে ইউক্রেন যুদ্ধে প্রায় ৩ লাখ সৈন্য নিয়োগের পর দেওয়া হয়। পুতিন বলেছেন, তিনি আপাতত নতুন করে সৈন্য নিয়োগের প্রয়োজন দেখছেন না।
শ্রমিক সংকট সংক্রান্ত গবেষণার লেখক নিকোলাই আখাপকিনের বরাত দিয়ে ইজভেস্তিয়া বলছে, রাশিয়ায় ২০২২ ও ২০২৩ সালে শ্রমিকের ঘাটতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে দেশটিতে গাড়িচালক এবং দোকান কর্মীদের তুমুল চাহিদা তৈরি হয়েছে।
রাশিয়ার সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মোট কর্মশক্তিতে শূন্যপদের সংখ্যা বেড়ে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে। যা এক বছর আগের ৫ দশমিক ৮ শতাংশের তুলনায় বেশি।
গবেষণার বরাত দিয়ে ইজভেস্তিয়া বলেছে, ‘‘আমরা যদি রাশিয়ার সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থার উল্লেখ করা পুরো শ্রম শক্তির দিকে নজর দিই, তাহলে ২০২৩ সালে রাশিয়ায় শ্রমিক ঘাটতির সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৮ লাখে।’’
রাশিয়ার শ্রম মন্ত্রী অ্যান্টন কোটিয়াকোভ বলেছেন, চলতি বছর দেশের উৎপাদন, নির্মাণ এবং পরিবহন খাতে শ্রমশক্তির ঘাটতি তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে। কর্মী নিয়োগের জন্য কোম্পানিগুলো মজুরি বাড়াতে বাধ্য হয়েছে।
রাশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব ইকোনোমিকসের অধ্যাপক তাতায়ানা জাখারোভা বলেছেন, দেশে সম্ভবত আগামী বছরও শ্রমিকের ঘাটতি থাকবে। কারণ কারখানার শ্রমিক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, শিক্ষক এবং অন্যান্য পেশার শূন্যপদ পূরণ করা অত্যন্ত কঠিন হবে।
সূত্র: রয়টার্স।