২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে টানা দুই ম্যাচে জয়ে উড়ছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। তবে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে শেষ মূহুর্তে গোল হজম করে ১-১ গোলে ড্র করে হোঁচট খেয়েছিল তারা। এতে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বাছাই পর্বে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার কাছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানও হারিয়ে বসে সেলেসাওরা। এবার উরুগুয়ের কাছে হেরেই বসল নেইমার জুনিয়ররা।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) ঘরের মাঠ এস্টাডিও সেন্টেনারিও স্টেডিয়ামে ব্রাজিলকে আতিথ্য জানায় উরুগুয়ে। টানটান উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে ৪৫ মিনিটেই ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন ব্রাজিলের প্রধান তারকা নেইমার জুনিয়রের চোট। দীর্ঘ ৭ মাস মাঠের বাইরে কাটানো এই ফরোয়ার্ড মাঠ ছাড়ার পর ‘উল্টো পথে’ হাঁটা র্যামন মেনেজেসের শিষ্যরা ২-০ ব্যবধানে হার নিয়ে মাঠে ছেড়েছে।
উরুগুয়ের জন্য এমন জয় ঐতিহাসিক—ই বলা চলে! কারণ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে হলুদ শিবিরকে দীর্ঘ ২২ বছর পর হারাতে সক্ষম হয়েছে তারা। বিপরীতে তারকায় সমৃদ্ধ আক্রমণভাগ নিয়েও বলার মতো গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি ব্রাজিল। চোটের কারণে নেইমারের ছিটকে যাওয়ার পর তাদের এমন হার বেশ শোচনীয়। আর আগের তিন ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জেতা উরুগুয়ে দাপট দেখিয়ে জিতেছে।
এর আগে ব্রাজিল-উরুগুয়ের সর্বশেষ পাঁচ দেখায় মাত্র একটি ম্যাচে জয় পেয়েছিল উরুগুয়ে। সর্বশেষ ২০২১ সালের অক্টোবরে সেলেসাওদের কাছে তারা ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপে হতাশার এক অধ্যায় শেষে এখনও পুরোপুরি স্বস্তিতে ফেরার পথ খুঁজে পাচ্ছে না ব্রাজিল। তাদের ভুলে যাওয়ার মতো সেই খাতায় আরেকটি হারের পাতা যুক্ত হলো আজ।
এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণ ছিল সফরকারীদের হাতে। তবে সেটি কেবল ছিল বল দখলে, সেভাবে তারা গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। কেবল ব্রাজিলই নয়, শুরুর অর্ধে সুযোগ তৈরি ব্যর্থ ছিল স্বাগতিকরাও। তবে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগেই নুনেজের গোল। উরুগুয়েকে লিড এনে দেওয়া গোল আসে ম্যাক্সিমিলিয়ানো আরাউহোর বাড়ানো ক্রসে, দারুণ হেডে লিভারপুল ফরোয়ার্ড নুনেজ বলটি জালে পাঠান।
প্রথমার্ধে ব্রাজিলের হতাশার সীমাকে চূড়ান্ত উচ্চতায় চড়িয়ে ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন নেইমার। দেখে মনে হয়েছে তিনি বেশ গুরুতর আঘাতই পেয়েছেন। হাঁটুর চোট নিয়ে অশ্রুসিক্ত ব্রাজিল তারকা মাঠ ছেড়েছেন স্ট্রেচারে চড়ে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়েই তার বদলি হিসেবে মাঠে নামানো হয় রিচার্লিসনকে।
বিরতির শুরুতেও বল দখলে এগিয়ে থাকে ব্রাজিল। তবে বারবারই বল হারাচ্ছিল সেলেসাও শিবির। নিয়মিত বিরতিতে উরুগুয়ের রক্ষণে হানা দিয়েও তারা বলের গন্তব্য ঠিক রাখতে ব্যর্থ হয়। বিপরীতে সেখান থেকে পাল্টা আক্রমণে যায় স্বাগতিক উরুগুয়ে। পরে ৬৯তম মিনিটে ম্যাচে সমতায় টানার প্রায় কাছাকাছিই ছিল ভিনি-রদ্রিগোরা। ৩০ গজ দূর থেকে নেওয়া রদ্রিগোর এক ফ্রি-কিক শট গোলবার কাঁপিয়ে বাইরে চলে যায়।
এরপর ৭৭ মিনিটে ডি-বক্সে নুনেজের পাস থেকে দারুণ এক গোল করেন আনমার্কে থাকা উরুগুয়ের মিডফিল্ডার নিকোলাস দে লা ক্রুজ। এই গোলেই উরুগুয়ের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। ম্যাচের বাকি সময়ে আবারও বল নিজেদের দখলে রেখে আক্রমণ চালিয়ে যায় ব্রাজিল, তবে গোলের দেখা পায়নি। ম্যাচের শেষদিকে এসে নিজেদের ধৈর্য হারিয়ে ফেলে ব্রাজিলের ফুটবলাররা। একের পর এক ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ম্যাথিউস কুনহা, গ্যাব্রিয়েল জেসুস এবং গোলরক্ষক এডারসন।
একইদিন পেরুর বিপক্ষে মাঠে নেমেছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। ৩ ম্যাচ খেলে ৯ পয়েন্ট নিয়ে আলবিসেলেস্তেরা টেবিলের শীর্ষে রয়েছে। ব্রাজিলের বিপক্ষে জয় নিয়ে ৪ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট পেয়েছে উরুগুয়ে, যা তাদের টেবিলের দুইয়ে উঠিয়ে দিলো। সমান ম্যাচে তাদের সমান পয়েন্ট নিয়েও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় টেবিলের তিনে অবস্থান করছে ব্রাজিল।