ডেনমার্কে রেস্তোরাঁ খুলতে চেয়েছিল মাদক ব্যবসায়ী

Date: 2023-10-25
news-banner
ভারত থেকে কুমিল্লা সীমান্ত হয়ে দেশে আসছে নতুন মাদক টাপেন্টাডল ট্যাবলেট। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তা ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি মাদকচক্র। এই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তারে করে এমন তথ্য জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।

ডিএনসির কর্মকর্তারা বলছেন, কুমিল্লা থেকে তামজীদ পাটোয়ারী (২৯) কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ছদ্মনামে ওষুধের চালান দিয়ে টাপেন্টাডল ট্যাবলেটের চালান ঢাকায় নিজের ঠিকানায় পাঠাতেন। তিনি নিজেই এগুলো কুরিয়ার সার্ভিস থেকে সংগ্রহ করে হাজারীবাগের নিজের ভাড়া বাসায় রাখতেন। সেখান থেকে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী আবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাতেন।

ঢাকার হাজারীবাগের হাজী আফছার উদ্দিন সড়কের একটি বাসা থেকে ৩ অক্টোবর ১ লাখ ২১ হাজারটি টাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ তামজীদ ও তাঁর সহযোগী মনিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেন ডিএনসির কর্মকর্তারা। তাঁদের গ্রেপ্তারের পরই ডিএনসির কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানতে পারেন। অভিযানে তাঁর কাছ থেকে নগদ সাড়ে ৮ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়।

ডিএনসি বলেছে, তামজীদ ডেনমার্কে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল, সেখানে একটি রেস্তোরাঁ খুলবেন। এ জন্য দরকার ছিল দেড় কোটি টাকা। মাদক ব্যবসা করে তিনি দেড় কোটি টাকা আয়ও করেছেন। এরই মধ্যে ভারতে তিনি প্রায় ৭৫ লাখ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেছেন।
ডিএনসির কর্মকর্তাদের ভাষ্য মতে, টাপেন্টাডল ট্যাবলেট মূলত ব্যথানাশক হিসেবে ভারতে ব্যবহৃত হয়। তবে বাংলাদেশে এটি ‘খ’ শ্রেণির মাদক। ২০২০ সালে এই ট্যাবলেটকে মাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দেশে ইয়াবা ট্যাবলেটের বিকল্প হিসেবে এই মাদক ব্যবহার করছিল মাদকাসক্তরা। গ্রেপ্তারের পর তামজীদ ও তাঁর সহযোগী মনিবুর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। তাতে বলেছেন, ভারতের একজন নাগরিকের মাধ্যমে ভারত থেকে দেশে আনতেন এই ট্যাবলেট। পরে ক্রেতাদের চাহিদামতো দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতেন।

ডিএনসির ঢাকা মহানগর উত্তর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, তামজীদের বাবা ব্যবসায়ী ছিলেন। কুমিল্লায় তাঁদের সার ও কীটনাশকের ব্যবসা এবং ঢাকার হাজারীবাগে একটি রেস্তোরাঁ ছিল। কয়েক বছর আগে তিনি মারা যান। তারপর থেকে তাঁর বাবার ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন তামজীদ। দুই বছর আগে এক ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে পরিচয় হয় তামজীদের। তিনিই তামজীদকে টাপেন্টাডল ট্যাবলেট এনে ব্যবসার পরামর্শ দেন। তারপর রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়ে তিনি এই ব্যবসা শুরু করেন। গ্রেপ্তারকৃত মনিবুর তাঁর রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক ছিলেন।

আসামিদের জবানবন্দির বরাত দিয়ে ডিএনসির কর্মকর্তারা জানান, ভারতের নাগরিক কথিত চিকিৎসক প্রশান্ত সাহা বিভিন্ন সময় তামজীদের রেস্তোরাঁয় আসা-যাওয়া করতেন। এই সূত্র ধরেই তাঁর সঙ্গে তামজীদের পরিচয় হয়। তিনি আন্তদেশীয় মাদক চক্রের সদস্য। প্রশান্ত সাহা ভারতের তেলেঙ্গানা এবং গান্ধীনগর এলাকা থেকে এটি সংগ্রহ করে কুমিল্লার বিভিন্ন সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে পাঠাতেন।
ডিএনসির ঢাকা মহানগর উত্তর অঞ্চলের উপপরিচালক রাশেদুজ্জামান বলেন, টাপেন্টাডল ট্যাবলেট কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় আনতেন তামজীদ। গত দুই বছরে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেই ৩২টি চালানের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। আরও কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও এগুলো ঢাকায় আনা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে।

image

Leave Your Comments