নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। স্থানীয়রা এই দৃশ্য অনুভব করলেও দেশের অন্যান্য এলাকার মানুষের কাছে এই খবর ছিল না। তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, এমন সংবাদ মাত্র কয়েক বছর আগে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। বর্তমানে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসছেন তেঁতুলিয়ায়।
শরৎ, হেমন্ত আর শীতে ভোরের আলো মেখে জাগতে শুরু করে কাঞ্চনজঙ্ঘা। অপার সৌন্দর্যের বিস্তৃতি ঘটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার শরীর ঘেঁষে চলে গেছে বিস্তৃত হিমালয়। সবুজ আর কালো রঙ মেখে হিমালয়ও হয়ে ওঠে অপরুপ।
চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য মেলে ধরে সীমান্তের ওপারে জেগে ওঠা কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণপিপাসুদের দুহাত বাড়িয়ে ডাকছে। কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় মনোমুগ্ধকর শোভা উপভোগ করতে প্রতিদিন হাজারো ভ্রমণপিপাসু প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটক আসছেন তেঁতুলিয়ায়।
মোটামুটি সারাদিনই দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার শৃঙ্গ। মাঝে মাঝে সাদা মেঘের ভেলায় হারিয়ে যায়। আবার জেগে ওঠে। মাঝে মাঝে ভোর বেলা থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা যায় তাকে। জেগে ওঠার সাথে সাথে নানা রঙ-এর খেলা শুরু হয়। ভোরের সূর্যের আভা ছড়িয়ে পড়লে কাঞ্চনজঙ্ঘা হয়ে ওঠে লাল টকটকে। দিন পেরনোর সঙ্গে রং বদলাতে থাকে তার। কমলা, তারপর হলুদ, তারপর সাদা। হঠাৎ হারিয়ে যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, বাংলাদেশের নানা প্রান্ত থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসা পর্যটকদের পদচারণায় উৎসবের আমেজ চলছে তেঁতুলিয়ায়। পর্যটকরা ভোর বেলা উঠে মহানন্দা নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা নয়ন জুড়ানো ডাকবাংলো পাড়ে সমবেত হচ্ছেন কাঞ্চনজঙ্ঘার রুপ অবলোকন করার জন্য। যদিও গত কয়েকদিন থেকে কুয়াশায় আকাশ ঢেকে থাকার কারণে দেখা মিলেনি কাঞ্চনজঙ্ঘার। তারপরও ছুটে আসছেন হাজার হাজার পর্যটক।
কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা কয়েকজন পর্যটক জানালেন, দেখে মুগ্ধ হয়েছেন তারা। দুই দিন পর অবশেষে অপ্রত্যাশিতভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে ধীরে ধীরে প্রকাশিত হতে দেখেন তারা। যেটা ছিলো অদ্ভুত।
ঘুরতে এসে নাট্যকার নির্দেশক এবং অভিনেতা আশিষ খন্দকার বলেন, এখানে এলে পুরো ভারতবর্ষের ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। তেঁতুলিয়ার হেমন্তের শীত ‘প্রথম প্রেমিকার সাথে প্রথম দেখা হওয়ার মতো’। এখানে এসে আমি ‘টাইমলেস’ হয়ে যাই। এখানকার পানি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুপেয় পানি।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং তেঁতুলিয়ার সৌন্দর্য দেখতে অসংখ্য পর্যটক ছুটে আসছেন। তেঁতুলিয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ, জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, পুলিশ কর্তৃপক্ষের ডাকবাংলো, জনস্বাস্থ্য বিভাগের রেস্ট হাউস, বনবিভাগের রেস্ট হাউসসহ সরকারি সকল ডাকবাংলোতে এসব পর্যটক রাত্রীযাপন করছেন। বেসরকারিভাবেও গড়ে উঠেছে বেশ কিছু আবাসিক। শুরু হয়েছে কমিউনিটি ট্যুরিজম, অনেকে বাড়িতেও রাখছেন পর্যটক। বাড়ছে কাজের ক্ষেত্র।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি জানান, পর্যটকদের জন্য সকল ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারেন, এজন্য আমরা সার্বক্ষণিক সচেষ্ট আছি।
উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহুমুদুর রহমান ডাবলু জানান, অসংখ্য পর্যটক আসছেন। তেঁতুলিয়ায় এখন উৎসব চলছে বলা যায়। পর্যটকদের আনন্দ দেয়ার জন্য আরও উদ্যোগ প্রয়োজন আছে। তেঁতুলিয়াকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, তেঁতুলিয়ায় শীত বিরাজ করছে। এই শীত উপভোগ করার জন্য পর্যটকরা ছুটে আসছেন। পর্যটকদের সুবিধার জন্য আমরা নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো সংস্কার করা হয়েছে। মহানন্দা নদীর তীরগুলোকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ নজরদারি রয়েছে।