আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রত্যাশিত অনুকূল পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই রাজনৈতিক পরিবেশটা অনুকূল হয়ে উঠুক। আমার যে প্রত্যাশা ছিল, আজকে ছয় মাস, আট মাস, নয় মাস, এটার সমাধান করতে পারলেন না। দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা সমাধান করতে পারেন না, আমি একা কীভাবে...একটা জিনিস ওভারনাইট (রাতারাতি) সমাধান হবে না।’
‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: গণমানুষের ভূমিকা, জাতির প্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দেশের গণমাধ্যমপ্রধানদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সবাইকে নিরন্তর আহ্বান করে যাচ্ছি, সংলাপ করেছি। যারা নির্বাচনে আসতে চান না তাদের আমার পক্ষ থেকে আধা সরকারিপত্র দিয়েছি। সাড়া পাইনি। রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কৌশল তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তাদের নিজস্ব কৌশল থাকতে পারে। আমরা তার মধ্যে অনধিকার চর্চা করব না।
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এক বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও অন্য কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন চায় রাজনৈতিক পরিবেশ অনুকূল হয়ে উঠুক। এজন্য সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশন আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে চায়। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার কথাও জানানো হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে। যদিও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এখনো বড় দুই দল মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি। তবে সময়মতো নির্বাচন করার ব্যাপারে নিজেদের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছে ইসি।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য নানাজনের সঙ্গে বসে তাদের মত নেয় নির্বাচন কমিশন। এরই অংশ হিসেবে আজ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সম্পাদকদের সঙ্গে বসে নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থাটি। ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: গণমাধ্যমের ভূমিকা, জাতির প্রত্যাশা’ শীর্ষক কর্মশালায় ৩৮ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সভায় সূচনা বক্তব্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কুসুমাস্তীর্ণ কোনো জমিনের ওপর দিয়ে চলছি না। সমালোচনা হচ্ছে, অনাস্থার কথা বলছে, সংকটের কথা বলছে। আমরা কোনো দল নই। আমরা নির্বাচন আয়োজন করছি আয়োজক হিসেবে। সে জন্য রাজনৈতিকভাবে অনুকূল পরিবেশের আবেদন প্রথম থেকেই বহাল রেখেছি। প্রত্যাশা প্রথম থেকেই ছিল, এখন অবধি সেই প্রত্যাশিত অনুকূল পরিবেশটুকু হয়ে ওঠেনি। আমরা চাই রাজনৈতিক পরিবেশটা অনুকূল হয়ে উঠুক। আমাদের আরাধ্য কর্মটা সহজ হোক। সেটা আমরা প্রত্যাশা করি।’
নির্বাচন কমিশন নিরন্তর আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সংলাপ করেছি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। যারা অনাগ্রহী, আসতে চান না, তাদের প্রতিও আমাদের বিনীত আবেদন ছিল যে আপনারা আসেন। শেষ পর্যন্ত আমি আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দিয়েও সেই দল ও তার প্রতি সহানুভূতিশীল অন্য যেসব দল আছে, তাদের প্রতি আবেদন করেছিলাম। অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় চা খেতে আসেন, আমরা কিন্তু সাড়া পাইনি।’
এর মাধ্যমে ইসি দেখাতে চেয়েছিল যে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে—এমন মন্তব্য করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘তাদের (বিএনপিসহ যেসব দল ইসির সঙ্গে সংলাপ করেনি) যে রাজনৈতিক কৌশল, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। সেখানে আমার বলার কিছু নেই। আমরা স্পষ্ট করে জানিয়েছি, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের বা জোটের রাজনৈতিক কৌশল থাকতে পারে, সেটা রাজনৈতিক ইস্যু, নির্বাচন কমিশন ওর মধ্যে অনধিকার চর্চা করবে না। কিন্তু আমরা নিরন্তর আহ্বান জানিয়ে যাব, আপনারা আসেন, সমস্যার সমাধান হোক। অথবা মাঠে আপনারা বিরাজমান সংকটগুলো নিরসন করুন।’