গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তি করার জন্য নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জিম্মি এক ইসরায়েলি নারী।
আজ সোমবার (৩০ অক্টোবর) হামাসের প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় এই আহ্বান জানানো হয়। সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিডিও বার্তায় গাজায় জিম্মি ওই ইসরায়েলি নারী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হামাসের সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তি সই করার তাগিদ দেন।
ওই নারীর পাশে আরও দুই ইসরায়েলি নারীকে দেখা যায়। নিজের পরিচয় গোপন রেখে ওই নারী দাবি করেন, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি বসতিতে হামাসের আকস্মিক হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে নেতানিয়াহু সরকার। অতর্কিত ওই হামলায় এক হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছিল এবং ২২০ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা।
ইসরায়েলি ওই নারী বলেন, ‘ আমাদের এমন পরিণতির জন্যে আপনি দায়ী। আপনি আমাদের মারতে বসেছেন। আপনি কি চান এখানকার সেনারা আমাদের মেরে ফেলুক।’ নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি আমাদের সবাইকে খুন করেছেন—এটা কি যথেষ্ট নয়? আমাদের মুক্ত করতে এখনই বন্দী বিনিময় চুক্তিতে সই করুন।
অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ হামলায় গত ২২ দিনে নিহত হয়েছেন আট হাজার ৩০৬ ফিলিস্তিনি। এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আজ সোমবার (৩০ অক্টোবর) এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সর্বাত্মক অবরোধের মুখে থাকা গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা আট হাজার ৩০৬ জনে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শিশু রয়েছে তিন হাজার ৪৫৭টি আর নারীর সংখ্যা দুই হাজার ২৩৬ জন। এখনো বহু মানুষ ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে বা নিখোঁজ রয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর বর্বরোচিত এই হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে রোববার (২৯ অক্টোবর) পর্যন্ত ২১ হাজার ৪৮ ফিলিস্তিনি নাগরিক আহত হয়েছেন।
এদিকে, গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় চিকিৎসকসহ ১২৪ স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। সোমবার (৩০ অক্টোবর) এমনটি জানিয়েছেন, গাজায় ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদ্রসা। তিনি আরও জানিয়েছেন, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানি সঙ্কটে ২৫টি অ্যাম্বুলেন্স অচল হয়ে পড়েছে এবং ৩২টি মেডিকেল সেন্টারও পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে।
গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম হাসপাতাল আল-কুদসে ইসরায়েলি হামলার শঙ্কা আরও তীব্র হয়েছে। এর আগে হাসপাতালটি খালি করার নির্দেশ দেয় ইসরায়েল সেনাবাহিনী। হাসপাতালটিতে হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে তারা এটি খালি করার নির্দেশ দেয়। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে জানিয়েছে, এই অনৈতিক নির্দেশ মানা অসম্ভব।
গত চার দিন গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে ট্যাংক নিয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে দিনরাত স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এদিকে, সিরিয়া ও লেবাননে সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী। দেশটির সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামাসের বিরুদ্ধে তাদের কার্যক্রম মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত হতে পারে। সোমবার (৩০ অক্টোবর) সকালে সিরিয়ায় এবং হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে লেবানেন জেট ফাইটার থেকে রকেট হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তবে এসব হামলা ইসরায়েলের ভূখণ্ডের মধ্য থেকেই চালানো হয়েছে।