দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন রেলপথের চলাচলের জন্য খুলে দিবে ১২ নভেম্বর। প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা স্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে এর শুভ উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের আগে নবনির্মিত এ পথে
ট্রেনের ভাড়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চট্টগ্রাম থেকে
কক্সবাজারের সর্বনিম্ন ভাড়া ৫৫ ও সর্বোচ্চ ৭৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
শোভন ও স্নিগ্ধায়ও যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাসের চেয়েও অর্ধেক।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের আগের ভাড়ার সঙ্গে নতুন এ ভাড়া যুক্ত করে শিগগিরই
ঢাকা-কক্সবাজারের ট্রেন ভাড়া অনুমোদন দেয়া হবে বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ
নিশ্চিত করেছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বর্তমানে নন-এসি
বাসের ভাড়া ৪২০ টাকা ও এসি চেয়ার ৮০০ টাকা। কিন্তু ট্রেনের একই ধরনের
(আন্তঃনগরে শোভন চেয়ার) টিকিটের ভাড়া রাখা হয়েছে মাত্র ২২০ টাকা, যা কিনা
বাসের চেয়ে ৪৭ দশমিক ৬২ শতাংশ কম। অন্যদিকে বাসের এসি চেয়ারের ভাড়ার সমান
ট্রেনের স্নিগ্ধা টিকিটের ভাড়া ৪৮ দশমিক ২৫ শতাংশ কম, ৪১৪ টাকা। এছাড়া
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সাধারণ দ্বিতীয় শ্রেণীর ভাড়া ৫৫ টাকা ও
আন্তঃনগর ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩৪
টাকা। আর প্রথম শ্রেণীর সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৪৮ টাকা। ঢাকা
থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেনের ভাড়া আগে থেকেই নির্ধারিত। সে হিসাবে ঢাকা
থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনের সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ৫৬৫ টাকা
(শোভন চেয়ার), প্রথম শ্রেণীর সর্বনিম্ন ভাড়া ৮৬৩ টাকা (প্রথম চেয়ার/সিট)
এবং প্রথম শ্রেণীর সর্বোচ্চ ভাড়া ১ হাজার ৯৭৭ টাকা (এসি বার্থ) হবে।
চট্টগ্রাম
থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলে নির্মিত রেলপথ রয়েছে। চট্টগ্রাম
রেলওয়ে স্টেশন থেকে এ পথে স্টেশন সংখ্যা ১৪টি। এসব স্টেশনের ভাড়াও নির্ধারণ
করা রয়েছে। আগে কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল না করায় এবং রেলওয়ের নতুন নিয়ম
অনুযায়ী ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের রেলওয়ে সেতুর ভাড়া নির্ধারণের পদ্ধতি
পরিবর্তন হওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেনের ভাড়া
পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এ হিসাবে কক্সবাজার পর্যন্ত মোট সাতটি সেতুর জন্য
বাড়তি ৫৪ কিলোমিটারের ভাড়া আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে
কক্সবাজারের প্রকৃত দূরত্ব ১৫০ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার বলেও বাড়তি পন্টেজ চার্জ
ধরে বাণিজ্যিক দূরত্ব হবে ২০৫ কিলোমিটার। ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের ৩২১
কিলোমিটারের বাণিজ্যিক দূরত্ব বিবেচনায় ঢাকা-কক্সবাজার পর্যন্ত ভাড়া
পুনর্নির্ধারণ হবে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত চলাচলরত
লোকাল ও ডেমু ট্রেনের ভাড়ার কোনো পরিবর্তন হবে না বলে জানিয়েছে রেলওয়ের
মার্কেটিং শাখা।
জানা গেছে, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথের
ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হবে ৭ নভেম্বর। তবে আনুষ্ঠানিক
উদ্বোধন হলেও প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ না হওয়ায় এ রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন
চলাচল শুরু হতে আরো অপেক্ষায় থাকতে হবে যাত্রীদের। প্রকল্পের স্টেশন ভবন
নির্মাণকাজ, জনবল নিয়োগ ও সিগন্যালিং ব্যবস্থা সম্পন্নের পর ট্রেন সার্ভিস
চালু করতে আরো অন্তত কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। রেলওয়ে আশা করছে, প্রকল্পটি
বাস্তবায়ন হলে এটি হবে দেশের অন্যতম জনপ্রিয়, ব্যস্ত ও লাভজনক রেল রুট।
এ
বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেন, ‘ঢাকা কিংবা বিভিন্ন গন্তব্য থেকে রেলপথে চট্টগ্রামের ভাড়া
নির্ধারিত আছে। এমনকি চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ থাকায়
সেখানকার ভাড়াও নির্ধারণের প্রয়োজন নেই। দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন
রেলপথ নির্মাণ হওয়ায় রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে।
এক্ষেত্রে ১০০ মিটারের বেশি সেতুগুলোর পন্টেজ চার্জ যুক্ত করেই ভাড়া
নির্ধারণ করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর মতো দীর্ঘ দূরত্বের সেতু কিংবা উড়াল সড়ক
বা ভায়াডাক্ট না থাকায় ঢাকা-কক্সবাজার যাতায়াতের ট্রেনের ভাড়া তুলনামূলক
কমই থাকবে।’ তবে উদ্বোধনের আগেই নতুন এ রেলপথের বিভিন্ন ট্রেনের ভাড়া ঘোষণা
করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।