যুক্তরাষ্ট্র কেন চায় জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে

Date: 2023-11-12
news-banner

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সরিয়ে দিতে চাওয়ার ব্যাপারে পশ্চিমাদের (যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র) মধ্যে ঐকমত্য বাড়ছে।


লরি জনসন মনে করেন সিআইএ ও এমআই-৬-এরই মধ্যে জেলেনস্কিকে সরানোর মঞ্চ সাজিয়ে ফেলেছে। হয় জেলেনস্কিকে মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানো হবে। অথবা জেলেনস্কি যদি সেটাতে রাজি না হন, তাহলে মায়দান ঘরানার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে।


যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও ইউক্রেনে নির্বাচিত সরকার বদল করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড সে সময় নেপথ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০১৪ সালে এ বিষয়ে ন্যুল্যান্ড ও কিয়েভে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেফরি প্যাটের মধ্যকার ফোনালাপ ফাঁস হয়েছিল। গণমাধ্যমে সেটি প্রকাশিত হয়েছিল।


ন্যুল্যান্ড ও প্যাটের ফোনালাপটি ছিল কৌতূহল-উদ্দীপক। কেননা, তাঁরা ইউক্রেনের জন্য একজন গ্রহণযোগ্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাই করছিলেন। এ জন্য তাঁদের যাঁরা সহযোগিতা করতে পারেন, তার যে তালিকা তাঁরা করেছিলেন, সেখানে তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (বর্তমান প্রেসিডেন্ট) এবং বর্তমান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভ্যানের নাম ছিল।


মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকান দলীয় সদস্যরা কয়েক বছর ধরে ইউক্রেনে বাইডেনপুত্র হান্টারের কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্ত করে আসছেন। তাঁদের এই অভিযোগও (যদিও এর সাপেক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ নেই) রয়েছে যে বাইডেন নিজে তাঁর ছেলের ব্যবসা রক্ষায় হস্তক্ষেপ করেছেন।


ইউক্রেন যে স্বাধীন দেশ নয়, সেটা বলার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ আছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে শুধু সেনা সহায়তা দিচ্ছে না, তারা দেশটির সরকারি কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের বেতনও জোগাচ্ছে, অবসর ভাতার অর্থও ওয়াশিংটন দিচ্ছে।

বাইডেন, সুলিভ্যান ও ন্যুল্যান্ড—সেই তিন আমেরিকান খেলোয়াড়ই আবার ইউক্রেনের ব্যাপারে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এই তিনজন কেন জেলেনস্কিকে পরিত্যাগ করতে চাইছেন?

ওয়াশিংটন এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল যে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর জন্য তারা যে পাল্টা আক্রমণ অভিযানের পরিকল্পনা করেছিল, সেটা জেলেনস্কি অনুসরণ করেননি। নিজের সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুঝনি ও আরেক জেনারেল সিরোস্কিকে বিরোধিতা করে জেলেনস্কি তাঁর নিজের খেয়ালখুশিতে বাখমুত শহর পুনর্দখলে সেনা পাঠান। ইউক্রেনের এই শহরটি রাশিয়ার সেনাবাহিনী ও প্রিগোশিনের ভাগনার বাহিনীর হাতে পতন হয়েছিল।


রাশিয়ার বিরুদ্ধে বড় পরিসরের যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করার অর্থ হচ্ছে, ইউক্রেনের সেরা সেনা ইউনিটগুলোকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেওয়া।


এখানেই শেষ নয়, জেলেনস্কিকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আরও কিছু বিষয় রয়েছে। পাল্টা আক্রমণ অভিযানে ওয়াশিংটনের লক্ষ্য ছিল রাশিয়া যাতে ইউক্রেনের সঙ্গে একটা চুক্তিতে আসতে বাধ্য হয়। তথাকথিত সুরোভিকিন প্রতিরক্ষা রেখা ভেঙে দিয়ে ইউক্রেনীয় বাহিনী ক্রিমিয়ার ওপর হুমকি তৈরি করতে পারে। (যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক গণমাধ্যমে এই গল্প প্রকাশ হয়েছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী সফলভাবে সুরোভিকিন প্রতিরক্ষা রেখা ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু এই গল্পগুলো পুরোপুরি প্রোপাগান্ডা।)

image

Leave Your Comments