নিজস্ব প্রতিবেদক: জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে ‘আশার আলো’ দেখছেন গবেষক, বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মীরা। তাঁদের মতে, মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী বিদ্রোহীদের হাতে পর্যুদস্ত হচ্ছে। ফলে দুর্বল হয়ে পড়েছে সামরিক জান্তা সরকার। আশান্বিত হওয়ার আরও দু’টি কারণ উল্লেখ করেছেন তাঁরা।
রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে চলমান মামলায় কানাডা ও ব্রিটেনসহ বিশ্বের ছয়টি প্রভাবশালী দেশ যুক্ত হয়েছে। এছাড়া, গত বুধবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের সব জাতিগোষ্ঠীর মানবাধিকার রক্ষায় সর্বসম্মতিতে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করছেন তারা। প্রত্যাবাসন শুরু প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের কাছে রোহিঙ্গারা তাঁদের ফেলা আসা ঘর-বাড়ি ফেরত চেয়েছেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে দুই দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন গবেষক আসিফ মূনীর। শুক্রবার তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে চলমান গণহত্যা বিষয়ক মামলায় কানাডা, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ ছয়টি দেশের এক হয়ে কাজ করার ঘোষণা একটি ইতিবাচক এবং তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।” “রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে যে গণহত্যা পরিচালনা করা হয়েছে, সে বিষয়টি আদালতে আরও শক্তিশালীভাবে উপস্থাপন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হতে পারে,” বলেন তিনি।
আসিফ মূনীর বলেন, “আদালতে গণহত্যা প্রমাণিত হলে মিয়ানমারের সামরিক শাসকের ওপর ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হবে।” তিনি বলেন, “মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী এখন বিদ্রোহী বাহিনীর হাতে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে। সামরিক সরকার এখন বিপদে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপে প্রত্যাবাসনের সুযোগ তৈরি হতে পারে।” আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারিক কার্যক্রমে ছয়টি দেশের অংশগ্রহণ ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ।
তিনি বলেন, “আমাদের দেখতে হবে, এই ছয় দেশ মামলা পরিচালনার ব্যয় বহন করবে কি না। কারণ, আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা পরিচালনা করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। যে কারণে ব্যয় বহন করা গাম্বিয়ার জন্য কঠিন হয়ে পড়ছিল।”
অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, “মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এখন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপে আছে। তারা বিদ্রোহীদের কাছে হেরে যাচ্ছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশের উচিত মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো।
“মিয়ানমারকে বোঝানো যে, আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার বন্ধ হয়ে যাবে না। সুতরাং, তারা যত তাড়াতাড়ি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করবে—তাদের জন্যই ততই ভালো হবে।”
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এতে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ হারান, নারীরা ধর্ষণসহ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বসতবাড়ি ফেলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে এমন অভিযোগ এনে ২০১৯ সালের নভেম্বরে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। চার বছর পেরিয়ে গেলেও এই মামলার বিশেষ অগ্রগতি হয়নি।