বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট মেরাপিতে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ১১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই হাইকার। হাইকাররা মূলত পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করে থাকেন। রোববার (৩ ডিসেম্বর) আগ্নেয়গিরিটিতে অগ্নুৎপাত হয়। পরে নিহত এসব হাইকারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহান্তে ইন্দোনেশিয়ার মেরাপি আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাতের পরে ১১ জন হাইকারকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন।
সোমবার আরও তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে ছোট অগ্নুৎপাতের কারণে নিখোঁজ আরও ১২ জনের সন্ধানে চলমান উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়েছে।
বিবিসি বলছে, অগ্ন্যুৎপাতের সময় ওই এলাকায় ৭৫ জন পর্বতারোহী ছিলেন। তবে তাদের বেশিরভাগকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল। মাউন্ট মেরাপি ইন্দোনেশিয়ার সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে একটি এবং রোববার সেখানে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ৩ কিমি দূরের এলাকা পর্যন্ত ছাই ছড়িয়ে পড়ে।
এই ঘটনায় কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে এবং বাসিন্দাদের গর্তের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে যেতে নিষেধ করেছে। পাদাং সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এজেন্সির প্রধান আবদুল মালিক বলেছেন, বেঁচে থাকা তিনজনকে গর্তের কাছে পাওয়া গেছে এবং তারা ‘দুর্বল এবং শরীরের কিছু অংশ পুড়ে গেছে’।
এছাড়া সোমবারের শুরুতে ৪৯ জন পর্বতারোহীকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়, যাদের মধ্যে অনেকেই দগ্ধ হয়েছেন। রোববারের অগ্ন্যুৎপাতের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের বিশাল মেঘ আকাশজুড়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এবং গাড়ি ও বহু রাস্তা ছাইয়ের স্তরে ঢেকে গেছে।
২ হাজার ৮৯১ মিটার (৯ হাজার ৪৮৫ ফুট) উচ্চতার মাউন্ট মেরাপি ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে পশ্চিমে অবস্থিত সুমাত্রা দ্বীপে অবস্থিত। ইন্দোনেশিয়ার ইয়োগাকার্তার প্রদেশের রাজধানী ইয়োগাকার্তা থেকে মাত্র ২৮ কিলোমিটার উত্তরে মাউন্ট মেরাপি আগ্নেয়গিরির অবস্থান।
আশপাশের গ্রামের ঝুঁকির বিষয়ে পর্যালোচনার পর সেখানকার কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালে মেরাপির সাত কিলোমিটার এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করে। চলতি বছরের মে মাসে মাউন্ট মেরাপিতে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল। সেসময় আগ্নেয়গিরিটির গর্ত থেকে উত্তপ্ত লাভা দুই কিলোমিটারেরও বেশি দূরের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে, ২০১০ সালে মেরাপি আগ্নেয়গিরির শেষ বৃহত্তম অগ্ন্যুৎপাতে অন্তত ৩০০ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। ওই সময় দেশটির কর্তৃপক্ষ মেরাপির আশপাশের এলাকা থেকে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার বাসিন্দাকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
তবে মেরাপি আগ্নেয়গিরিতে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটে ১৯৩০ সালে। ওই বছর মেরাপির অগ্নুৎপাতে কমপক্ষে ১ হাজার ৩০০ জন নিহত হয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, এশিয়ার বৃহত্তম দ্বীপদেশ ইন্দোনেশিয়ার জন্যসংখ্যা সাড়ে ২৭ কোটির বেশি। ভূতাত্ত্বিক অবস্থার কারণে নিয়মিতই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে ভূমিকম্প, অগ্নুৎপাত ও সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটে থাকে।
মূলত প্রশান্ত মহাসাগরের তথাকথিত ‘রিং অব ফায়ারে’ ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান হওয়ায় দেশটিতে প্রায়ই ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা দেখা যায়।