দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াত এবারও ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে নির্বাচন পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত এবারও ব্যর্থ হয়েছে। তাদের সকল ষড়যন্ত্রের জবাব ব্যালটের মাধ্যমে মানুষ দিয়ে দিয়েছে। বারবার নির্বাচন বর্জন করে বিএনপির জন্য এখন আগামী ৫ বছর অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করণীয় নেই।
তিনি বলেন, তাদের সকল অভিযোগ বাস্তবতা বিবর্জিত, ভিত্তিহীন ও মনগড়া। আজ সকালেও বিএনপি নেতা মইন খান প্রেস বিফ্রিং করে মিথ্যার ডালি নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন। এমন মিথ্যাচারই তাদের এই করুণ পরিণতির জন্য দায়ী।
কাদের বলেন, জনগণ এসব নব্য গোয়েবলসদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দিয়ে দিয়েছে। বিএনপি নিজেই বারবার ভুল রাজনীতি অনুসরণ করার কারণে একটি অকার্যকর এবং ব্যর্থ রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। তাদের নেতা কে?
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, জনগণের রায়ে নতুন রেকর্ড স্থাপন করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় হয়েছে। উৎসবমুখর, অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে আমরা আবারও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে এবং একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, বাংলাদেশ বিরোধী স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণ রায় দিয়েছে। জনগণের এই ঐতিহাসিক রায় বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করবে।
কাদের বলেন, জনগণের এ ম্যান্ডেট আমাদের দায়িত্ব এবং একই সঙ্গে শক্তি সাহস ও উৎসাহকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। জনতার রায়ে গণতান্ত্রিক বিশ্ব নতুন রেকর্ড স্থাপন করে টানা চতুর্থবার ও মোট পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার সকালে ভারত, রাশিয়া, চীন, ভূটান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের নিজ নিজ দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, উন্নয়নের নেত্রী শেখ হাসিনা জনতার এই বিশাল রায়ের প্রতি অতান্ত শ্রদ্ধাশীল। তিনি এ রায়ের প্রতিদান নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতিকে অব্যশই উপহার দেবেন। দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি পুনর্বার প্রমাণ করেছেন একটি নির্বাচিত সরকারের অধীনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কার্যকর থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব। এই দেশের সংবিধান অনুযায়ী একটি নির্বাচিত সরকার আরেকটি নির্বাচিত সরকারের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। আমরা সেইভাবেই নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছি।
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করবেন। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া ওয়াদা বাস্তবায়ন করব। নবউদ্যমে এই দেশ এগিয়ে যাবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
কাদের বলেন, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, গণমাধ্যমসহ বিদেশি সাংবাদিক-পর্যবেক্ষক সকলেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এ নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় এক মাইলফলক হয়ে থাকবে এবং বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে আরও শক্তিশালী করবে।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড তারেক জিয়া। এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী দুর্নীতি ও টাকা পাচারের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং পালিয়ে আছে বিদেশে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক গোপন বার্তায় তারেক জিয়াকে বাংলাদেশের সহিংসতার রাজনীতির গডফাদার হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। এ ধরণের একজন অপরাধীর আজ্ঞাবহ কর্মী হয়ে নিজেদের বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে ড. মইন খানের মতো বিদ্বান ব্যক্তিরা যখন প্রতিদিন লজ্জাস্করভাবে মিথ্যাচার করে যায়, ফরমায়েশি বক্তব্য দেয় তা দেখে একজন রাজনীতির মানুষ হিসেবে আমার নিজেরই লজ্জা লাগে।
মানুষ বিএনপি-জামায়াতকে দেখিয়েছে যে অপরাজনীতি করে এই দেশে জনগণের রায় পাওয়া সম্ভব না বলেও মন্তব্য করেন কাদের।
তিনি বলেন, আগুন সন্ত্রাস ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলতে পারে না, এটা এবারের নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ তাই প্রমাণ করেছে। আমরা বিএনপিকে বলব, সত্য মেনে নিয়ে রাজনীতি করুন, গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি অনুসরণ করুন, সংবিধান বিবর্জিত রাজনীতি পরিহার করুন। নতুবা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে আপনাদের নিক্ষিপ্ত হতে হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণই আওয়ামী লীগের শক্তি। জনগণের সেবা করাই আওয়ামী লীগের কাজ। জননেত্রী শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দেশের জনগণের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। শেখ হাসিনার ম্যাজিক হলো জনগণের প্রতি ভালোবাসা। তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতির অবশ্যই বাস্তবায়ন করবেন। আমরা জনগণের সঙ্গে ছিলাম, আছি ও থাকব। জনগণকে সাথে নিয়েই আমরা বাংলাদেশকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেবো। আমাদের আছেন শেখ হাসিনা, তাই আমাদের লক্ষ্য অর্জিত হবেই। তিনিই পেরেছিলেন, তিনিই পারবেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের সকল ভোটার জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদেরও তাদের দ্বায়িত্বশীল ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমরা এ নির্বাচনে বিজয়ী এবং পরাজিত সকল প্রার্থী এবং তাদের অনুসারীদেরকে সকল প্রকার সহিংসতা ও উস্কানী পরিহার করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, আগামী ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার আয়োজন করেছে।