দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আজ বৃহস্পতির সকালে প্রবল ঘূর্নিঝড় ‘মোখা’য় রূপ নেবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশ্লেষকগণ। অতঃপর ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে পেছনে বাঁক নিয়ে উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যেতে পারে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এটি দানবীয় শক্তিমত্তা নিয়ে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে। যদি দিক না বদলায় তবে আগামী রবিবার রাতের কোনো এক সময় কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলের ভূভাগে আঘাত করবে মোখা।আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে,গভীর নিম্নচাপটি গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫১৫ কি.মি. দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪৩৫ কি.মি. দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫১০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪৬৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, প্রধান-প্রধান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগ ১৪ মে সকাল ৬ টার পর থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলে আঘাত করার আশঙ্কার করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ও পিছনের অংশ সন্ধ্যা থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত উপকূল অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। মোখা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার সর্বোচ্চ সম্ভাবনার কথা মডেলগুলো নির্দেশ করছে। স্থল ভাগে আঘাতের সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার।চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলের উপর দিয়ে অতিক্রম করার সময় এই দুই জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলো ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের চোখ বা কেন্দ্র কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টি দ্বীপ, টেকনাফ,কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলার উপর দিয়ে অতিক্রম করার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে পাহাড় ধ্বসের প্রবল ঝুঁকি রয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন,ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি ধরে রাখার জন্য যে তিনটি প্রধান শর্ত প্রয়োজন তার তিনটিই আছে এবারের মোখার। সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রির উপরে এবং সমুদ্রে সঞ্চিত শক্তিযথেষ্ট পরিমাণে আছে,ফলে ঘূর্ণিঝড়টি আকারে অতিকায় হবে।