ইফতেখার উদ্দিন : ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল। একইসঙ্গে, সরকার পতনে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন ঠেকাতে মাঠেও শক্তিশালী অবস্থান গড়তে বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও সাধারণ জনগন ও যুবকদের আকৃষ্ট করতে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণকে সামনে রেখে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
প্রায় ৬ লক্ষ কর্মীকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন প্রচারে ট্রেনিং দেওয়া হবে। আগামী ২৬ অক্টোবর অনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসাবে ৩০০ (তিনশত) আসনে এমপি পদে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম প্রায় শেষ দিকে। ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদেরকে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারের মাধ্যমে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়া এবং বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবেলায় মাঠে সক্রিয় থাকার সবুজ সংকেত দিয়েছে দলটির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব।
একইসাথে দীর্ঘদিন একটানা ক্ষমতায় থাকার ফলে বিভিন্ন মহানগরী, জেলা, উপজেলাসহ যেসব ইউনিটে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে, সেগুলো নিরসনে কাজ করছে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে নিয়োজিত নেতাবৃন্দ।
কেন্দ্রের নেতারা জানান, ভোটের প্রস্তুতির পাশাপাশি নির্বাচন বানচালে এখন বিএনপি-জামায়াত কঠোর কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে। বিরোধীদের এসব আন্দোলন মোকাবেলা করে মাঠ দখলে রাখার জন্য দলের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী, মহানগর, জেলা, উপজেলা ও ইউনিট পর্যায়ের নেতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
নেতারা বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারকে অংশগ্রহণমূলক ও আকর্ষণীয় করতে এবার প্রথমবারের মতো তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরপরই ৩০০ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ। এরপর জাতির উদ্দেশ্যে ইশতেহার প্রকাশ করবে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রস্তুতির বিষয়ে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, আমাদের দল নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসাবে দলের যেসব কাজ রয়েছে, সেগুলোও প্রায় শেষের দিকে; যেমন নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন, সরকারের পরিকল্পনা ইত্যাদি।
দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বর্তমান মন্ত্রী ও এমপিদের মধ্যে প্রায় ৯০ জনের বিষয়ে নানান অভিযোগ থাকায় তারা এবার মনোনয়ন পাবেন না। ওই সব আসনে নতুন মুখ আসতে পারে। আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, আগামী মাসের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। আর জানুয়ারি ২০২৪এর শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, নেত্রী কী কী উন্নয়ন করেছেন, সেগুলো সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের অপশাসন এবং সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের চিত্রগুলোও তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দলের ভিতরে অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড নেতাকর্মীদের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যাতে করে তারা ভোটে কোনো প্রকার নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে না পারে।
এদিক আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপিও তার সমমনা দলগুলো সরকার পতনের আল্টিমেটাম দিয়ে বড় কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, অক্টোবর মাসে বিএনপির সঙ্গে তাদের কোয়ার্টার ফাইনাল, নভেম্বরে সেমি-ফাইনাল আর জানুয়ারিতে ফাইনাল খেলা হবে। এই খেলায় জয়লাভ করে জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে সরকার গঠন করবে।