নারীরা যেসব ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হন, তার মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যানসার অন্যতম। জরায়ুর সবচেয়ে নিচের অংশের নাম সারভিক্স বা জরায়ুমুখ, যা জরায়ু ও প্রসবের পথের মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত। নারীর জননাঙ্গের বিভিন্ন অংশের মধ্যে এই অংশে ক্যানসারের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।
অতিরিক্ত সাদা স্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, অতিরিক্ত অথবা অনিয়মিত রক্তস্রাব, সহবাসের পর রক্তপাত, মাসিক পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার পর আবার রক্তপাত, কোমর, তলপেট বা ঊরুতে ব্যথা ইত্যাদি জরায়ুমুখে ক্যানসারের উপসর্গ।
অল্প বয়সে যাঁরা অবাধ যৌনাচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন বা যাঁদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়, তাঁদের এই ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। একাধিক পুরুষ সঙ্গী থাকা বা পুরুষের একাধিক নারী সঙ্গী থাকা কিংবা ঘন ঘন সন্তান নিলে জরায়ুমুখে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
কারা ঝুঁকিপূর্ণ
১) অল্প বয়সে বিয়ে অথবা যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া।
২) অল্প বয়সে সন্তান প্রসব।
৩) ঘন ঘন এবং অধিক সন্তান প্রসব।
৪) একাধিক যৌনসঙ্গী।
৫) নিম্নবিত্তদের মধ্যে ক্যানসারের প্রকোপ বেশি থাকে।
৬) জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসেবে দীর্ঘদিন পিল খাওয়া এবং কনডম ব্যবহার না করা।
কারণ কী?
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস নামক একটি ভাইরাস মূলত এই ক্যানসারের প্রধান কারণ। ভাইরাসটি সাধারণত যৌনবাহিত। যৌন মিলনের ফলেই নারীর শরীরে তা প্রবেশ করে।
প্রতিরোধ
জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধের একটি অন্যতম উপায় হলো টিকা। এতে ৮৫ শতাংশ ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়। এ ছাড়া নিয়মিত জরায়ুর মুখ পরীক্ষা করে সহজেই ক্যানসার থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
টিকা কারা দিতে পারবেন?
টিকা দেওয়ার উপযুক্ত সময় হলো ৯-২৬ বছর বয়স। বিবাহিত জীবন শুরু করার পূর্বে টিকা অত্যন্ত কার্যকর। এ ছাড়া ৪৫ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ যাঁরা বিবাহিত, তাঁরাও দিতে পারবেন। আমাদের দেশে জরায়ুমুখ ক্যানসারের টিকা সহজলভ্য।
ডোজ
৯-১৪ বছর: দুটি ডোজ। প্রথমটি নেওয়ার ছয় মাস পর আরেকটি নিতে হবে।
১৫-৪৫ বছর: তিনটি ডোজ। প্রথম টিকা নেওয়ার এক মাস ও ছয় মাস পর বাকি দুটি টিকা নিতে হবে।
নির্ধারিত ডোজ মিস হলে?
দ্বিতীয় ডোজ প্রথম ডোজের ১২ মাসের মধ্যে দিলে ভালো। প্রথম থেকে শুরু করার প্রয়োজন নেই।
জেনে রাখা ভালো
টিকা নেওয়া থাকলেও নিয়মিত জরায়ুর মুখ পরীক্ষা করতে হবে।
এই টিকা জরায়ুমুখে ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম। জরায়ুমুখে ক্যানসার প্রারম্ভিক পর্যায়ে শনাক্ত করার পদ্ধতি বিভিন্ন দেশের হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে আছে। যাঁদের ঝুঁকি রয়েছে, তাঁরা বছরে একবার বা নেগেটিভ ক্ষেত্রে তিন বছর পরপর এই পরীক্ষা করবেন।
আমাদের দেশে জরায়ুমুখে ক্যানসারের হার বেশি। তাই প্রত্যেক নারীকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। নিয়মিত পরীক্ষা ও টিকা নেওয়ার মাধ্যমে সহজেই এই রোগ প্রতিহত করা সম্ভব।