নতুন পারমাণবিক নীতি ঘোষণা পুতিনের

Date: 2024-11-20
news-banner
রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের শর্ত শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লামিদির পুতিন। নতুন নীতি অনুযায়ী, রাশিয়া বা তার মিত্রের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতায় গুরুতর হুমকি এলে পারমাণবিক হামলা চালানো হতে পারে।
পুতিন এই নীতিগত পরিবর্তনটি এমন এক সময়ে অনুমোদন করেছেন যখন মার্কিন তৈরি আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (অ্যাটাকমস) ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেন রাশিয়ার ভেতরে আঘাত হেনেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার দুইজন মার্কিন কর্মকর্তা ও একটি সূত্র জানিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইউক্রেনকে মার্কিন তৈরি অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভেতরে হামলার অনুমতি দিয়েছে। রাশিয়ায় অ্যাটাকমস ছোড়ার অনুমতি পাওয়ার কিছু সময় পরই এ হামলা চালাল ইউক্রেন। এ হামলার মাধ্যমে ইউক্রেন রাশিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভূখণ্ডে প্রথমবারের মতো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করল। রাশিয়া বহুদিন ধরেই বলে আসছে, ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ফ্রান্সের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার ভেতরে ব্যবহার করে, তবে সেটিকে ন্যাটোর সরাসরি যুদ্ধে জড়িত হওয়া হিসেবে ধরা হবে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) পুতিন অনুমোদিত এই নতুন পারমাণবিক নীতিমালায় বলা হয়েছে, রাশিয়া বা তার মিত্র বেলারুশের সার্বভৌমত্ব বা ভৌগোলিক অখণ্ডতায় গুরুতর হুমকি তৈরি হলে পারমাণবিক হামলার কথা বিবেচনা করা হবে। যদি কোনো অ-পারমাণবিক রাষ্ট্র [রাশিয়াকে] আক্রমণ করে এবং সেটি কোনো পারমাণবিক শক্তি দ্বারা সমর্থিত হয়, তবে সেটি রাশিয়ার ওপর যৌথ আক্রমণ হিসেবে গণ্য হবে। আগের ২০২০ সালের নীতিমালায় উল্লেখ ছিল, কেবল শত্রুর পারমাণবিক আক্রমণ বা রাশিয়ার অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে এমন প্রচলিত আক্রমণের ক্ষেত্রেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হবে। হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর পিস রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসির গবেষক আলেকজান্ডার গ্রাফ বলেছেন, 'রাশিয়া এখন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের শর্ত আরও সহজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল জানিয়েছে, তারা তাদের পারমাণবিক নীতিমালায় কোনো পরিবর্তনের কারণ দেখছে না। উল্লেখ্য, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র মিলে বিশ্বের ৮৮ শতাংশ ওয়ারহেড বা পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ করে। রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্তের মূল ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট পুতিনের হাতেই রয়েছে। 
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তনের ফলে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া অনেক দ্রুত এবং গুরুতর হতে পারে। এদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে ইউক্রেন রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (অ্যাটাকমস) ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে। একটি ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বস্ত হওয়ার পর তার ধ্বংসাবশেষ থেকে একটি সামরিক স্থাপনায় আগুন ধরে যায়।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, 'আমরা এটিকে পশ্চিমাদের রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের একটি নতুন ধাপ হিসেবে বিবেচনা করছি এবং আমরা উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানাব।" তিনি আরও দাবি করেন, এই আক্রমণে মার্কিন প্রযুক্তি এবং ডেটা ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার কথা উল্লেখ করে ল্যাভরভ বলেন, রাশিয়া পারমাণবিক যুদ্ধ এড়ানোর জন্য সবকিছু করবে। 
ইউক্রেন যুদ্ধের সহস্রতম দিনে রাশিয়া তার ওপর আঘাত হানার সম্ভাব্য সব ধরনের তথ্যকে আরও বিস্তৃতভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। এতে বিমান, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং চালকবিহীন বিমানের মাধ্যমে আক্রমণের শঙ্কাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রাশিয়া এবং পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুদ্ধ এখন সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং সম্ভবত শেষ পর্যায়ে প্রবেশ করছে। এদিকে, রাশিয়ার সেনারা যুদ্ধের শুরুর দিকের পর থেকে সবচেয়ে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।
এই ঘোষণার পর বৈশ্বিক বাজারে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। জাপানি ইয়েন এবং সরকারি বন্ডের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু শেয়ারবাজার এবং ইউরোর মূল্য কমেছে। রাশিয়ার মুদ্রা রুবলও ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর প্রথমবারের মতো ১০০ রুবল প্রতি ডলারে নেমে এসেছে। রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ এই পরিস্থিতিকে ১৯৬২ সালের স্নায়ু যুদ্ধের কিউবান মিসাইল সংকটের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, 'নিউক্লিয়ার শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের ঝুঁকি এখন আর খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। আমরা একেবারেই নতুন সামরিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কেবল প্রতিরোধের জন্য, এবং শত্রুপক্ষ যেন রাশিয়া বা তার মিত্রদের আক্রমণ করার আগে প্রতিশোধের বিষয়ে নিশ্চিত থাকে, এটি নিশ্চিত করাই এই নীতিমালার লক্ষ্য।
image

Leave Your Comments