অসীম কুমার দাস, হাকিম আহমেদ রুবেলের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন আরচারির দেশসেরা জুটি রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী। শনিবার গোপনে দেশত্যাগ করে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে অবস্থান করছেন এই আরচারি দম্পতি। এভাবে শীর্ষ আরচারদের দেশ ত্যাগকে খেলাটির জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন সাবেক আরচাররা। তবে এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্তের কাছে বিষয়টি স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ‘আপনি দেশকে এতোকিছু দেয়ার পর, যখন কিছু পাবেন না। ফেডারেশন থেকে নিগৃহীত হবেন। জীবনে আর্থিক নিশ্চয়তা থাকবে না। তখন জীবন ও জীবিকার তাগিদে একজন ক্রীড়াবিদের এমন সিদ্ধান্ত নেয়াটা স্বাভাবিক।’ ২০২১ সালে বিশ্ব আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ আরচারি দলের সদস্য ছিলেন রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী। এর আগে আরচারি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো অসীম ও রুবেলও ছিলেন সেই দলের সদস্য। সেই ভিসা কাজে লাগিয়ে জাতীয় দলের কম্পাউন্ড বিভাগের আরচার অসীম কুমার সাহা ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে দেশ ছাড়েন। তবে তিনি ফেডারেশনকে জানিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং সেখানে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি চান। গত বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতিও পেয়ে যান তিনি। তার পথ অনুসরণ করেই ২০১৯ এসএ গেমসে দলগত রিকার্ভে সোনা জয়ী আরচার হাকিম আহমেদ রুবেল যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তিনি এখন অসীম কুমারের সঙ্গে আছেন। এবার অসীম, রুবেলের দেখানো পথেই হাঁটলেন রোমান-দিয়া। তবে রোমান-দিয়ার চলে যাওয়ার বিষয়টি মানতে পারছেন না বাংলাদেশের জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আরচারির পোস্টার বয় রোমান। সাম্প্রতিক নানা ইস্যুতে ওর ফর্ম খারাপ থাকলেও রোমান দেশের অন্যতম সেরা আরচার। তার ফেরার সুযোগ ছিল। দিয়াও চ্যাম্পিয়ন আরচার। ও ইনজুরিতে ছিল। ছুটি দেয়া হয়েছিল তাকে। তারা এভাবে চলে যাবে, তা মেনে নেয়া যায় না। এটা দেশের আরচারির জন্য খারাপ উদাহরণ।’ দেশের সেরা আরচারদের এভাবে চলে যাওয়াকে দুঃখজনক বলছেন জাতীয় দলের সহকারী কোচ মোহাম্মদ হাসান। তিনি বলেন, ‘এটা আসলেই দুঃখজনক। রোমানের কথা বাদ দিলাম। সে ছাড়াও যে তিন জন অসীম, হাকিম আহমেদ রুবেল ও দিয়া সিদ্দিকী গেছে ওরাও দেশের সেরা খেলোয়াড় ছিল। কিন্তু আরচারিতে ভবিষ্যত নেই দেখে চলে যাচ্ছে। এটা কিছুটা হলেও সত্য। কারণ এখানে চাকরি-বাকরির টানাপোড়েন আছে। আরচারিতে মাসিক বেতনও সেরকম নয়, যা একজন ফুটবলার বা ক্রিকেটার পান।’ ভবিষ্যতে জাতীয় দল আবারও যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোতে খেলোয়াড়দের পাঠাবে কিনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলে হাসান বলেন, ‘এই ঘটনার পর ফেডারেশন আবারও আমেরিকা বা উন্নত দেশে খেলতে পাঠাবে কিনা এ নিয়েও সংশয় থেকে যাচ্ছে।’ তবে আরচারদের এভাবে চলে যাওয়াটাকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। রোমান সানার অবদানের কথা স্বীকার করে মাবিয়া বলেন, ‘দেখেন রোমান দেশের প্রথম ক্রীড়াবিদ যে, সরাসারি অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করেছে। ওয়ার্ল্ড আরচারি, এসএ গেমসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আসর থেকে দেশকে স্বর্ণ পদকসহ নানা পদক জিতেছেন। এর বিনিময়ে দেশের কাছ থেকে, ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে কী পেয়েছেন? পেয়েছেন ২০-২৫ হাজার টাকা বেতনে আনসারের একটা চাকরি। আর ফেডারেশন থেকে পেয়েছেন মানসিক রোগীর তকমা। দেশকে এতো সাফল্য এনে দেয়ার পর যদি জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা না থাকে, একটু সম্মান না পাওয়া যায় তখন রোমান এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে খারাপ কিছু করেনি।’ রোমান দিয়ার দেশত্যাগে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে সেটাও স্বীকার করছেন টানা দুটি এসএ গেমসে সোনা জেতা এই ভারোত্তলন। এজন্য তিনি দায়ী করছেন ফেডারেশনকে। তার মতে ফেডারেশন যদি আর একটু দায়িত্বশীল হতো, সরকার যদি খেলোয়াড়দের আর্থিক নিরাপত্তার দায়িত্বটা নিতো তাহলে আমরা রোমান-দিয়ার মতো আরচারদের এতো দ্রুত হারাতাম না।’ তবে রোমান-দিয়ার চলে যাওয়াতে আরচারির খুব একটা ক্ষতি হবে না বলেই মনে করছেন ফেডারেশনটির সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজিবউদ্দিন আহমেদ চপল। তিনি বলেন, ‘আমাদের পাইপ লাইনে অনেক আরচার আছে। যাদের দিয়ে সহজে ওদের ঘাটতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব।’