বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) এবার অনেক কিছু নতুন থাকবে-এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল বিসিবি ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে। কিন্তু বাস্তবে এর কিছুই দেখা যায়নি। তবে নেতিবাচক দিক থেকে বিপিএল এবার সব কিছুকেই ছাড়িয়ে গেছে। পারিশ্রমিক ইস্যুতে আগের আসরগুলোতে কম বেশি আলোচনা হয়েছে। এবার সব আসরকেই ছাপিয়ে গেছে পারিশ্রমিক ইস্যু। দুর্বার রাজশাহী ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক থেকে শুরু করে দৈনিক ভাতা পর্যন্ত পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিদেশি ক্রিকেটার পারিশ্রমিক না পেয়ে ম্যাচও খেলতে নামেনি। টুর্নামেন্টের মাঝপথে ক্রিকেটারদের হোটেল বদলসহ আরও নানা ইস্যুতে বিপিএল যেন হয়ে উঠছে বিসিবির গলার কাঁটা। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এসে খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ আকুতি ভরা কণ্ঠে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটের যেন বদনাম না হয়, সবার সেই দায়িত্বটা পালন করা উচিত।’
পারিশ্রমিক ইস্যুতে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তাল ক্রিকেটাঙ্গন। নিয়ম অনুযায়ী এই সময়ে এসে ৭৫ ভাগ পারিশ্রমিক পাওয়ার কথা। দুই একটি দল বাদে বেশিরভাগ দলই প্রতিশ্রুত অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এদের মধ্যে দুর্বার রাজশাহী সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। ২৫ ভাগ পারিশ্রমিক পরিশোধ করে আরও ২৫ ভাগের চেক দিলেও সেটি বাউন্স হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রিকেটাররা। চিটাগং কিংসের বিরুদ্ধেও টাকা ঠিকমতো পরিশোধ না করার অভিযোগ আছে। খুলনা টাইগার্স ইতোমধ্যে ৪০ ভাগ টাকা পরিশোধ করেছে। আগামী সপ্তাহে আরও ৩৫ ভাগ পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে কঠিন সময় পার করছেন ক্রিকেটাররা।
মিরাজও জানালেন সেটাই, ‘দেখেন, আমরা এরকম পরিস্থিতির ভেতর কখনও পড়িনি। আর প্রতিটা মানুষের জন্যই প্রথমবার। আপনারা যে পজিশনে আছেন, আমরাও সেই একই পজিশনে। প্রত্যেকটা মানুষই এমন একটা (পরিস্থিতির) ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় প্রত্যেকটা মানুষেরই সমর্থন করা উচিত। কারণ দেখেন, আপনি যেটা বললেন গেট ভেঙে টিকিট পাচ্ছে না, খেলা দেখছে। নতুন কোনওকিছু এভাবে এলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন। কঠিন পরিস্থিতিতে প্রত্যেকটা মানুষ পাশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যে সমস্যাগুলো হচ্ছে, আশা করি আমাদের যারা ক্রিকেট বোর্ডে আছে, যারা দায়িত্বে আছে, তারা এটা সুন্দরভাবে হ্যান্ডেল করবে।’
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে পারিশ্রমিক ইস্যুতে মাঠেই আসেননি রাজশাহীর বিদেশি ক্রিকেটাররা। এসব বিদেশি মিডিয়াতে ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের বদনাম হচ্ছে তাতে। এমন পরিস্থিতিতে মিরাজের আকুতি, ‘এগুলো দিনশেষে কিন্তু আমাদেরই সবার বদনাম। যদি এ জিনিসগুলো (পারিশ্রমিক) ঠিক মতো কাঠামোতে না আনতে পারি, তাহলে দিনশেষে আমাদের ক্রিকেটের জন্য বদনাম হবে। আমাদের সবার বদনাম হবে। প্রত্যেকেরই দায়িত্ব আমাদের বাংলাদেশ ক্রিকেটের যেন কোনওরকম বদনাম না হয়। আমরা খুব সুন্দর যেভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেট খেলছি, বিশ্বে ভালো করলে বাহবা দিচ্ছে; সে জিনিসটা আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে বজায় রাখা।’
মিরাজের দল খুলনাকে নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি। ৪০ ভাগ পারিশ্রমিক পরিশোধ করা দলটি আগামী সপ্তাহে বড় একটি অংক পরিশোধ করবে বলে জানা গেছে। মিরাজও বলেছেন, ‘আমাদের টিম ইতোমধ্যে ৪০% পেমেন্ট করে দিয়েছে। আর আমার সঙ্গে ইকবাল ভাইয়ের কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন এই সপ্তাহের ভেতর ৩০-৩৫% পেমেন্ট করে দেবে। অলমোস্ট তো ৭০% এর কাছাকাছি আমরা সবাই পেয়ে যাবো। ’
পারিশ্রমিক ইস্যুতে এমন নেতিবাচক আলোচনা মিরাজদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করে, ‘অবশ্যই এটা খারাপ লাগছে। দিনশেষে আমরা খেলোয়াড়রা ক্রিকেট খেলি টাকার জন্য। যদি পারিশ্রমিক না পাই, প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের জন্যই খারাপ। সবাই একটা দিক থেকে আশা করবে অবশ্যই যেহেতু ক্রিকেট বোর্ড আমাদের অভিভাবক, ক্রিকেট বোর্ড অবশ্যই এটার ব্যাপারে কথা বলবে। তারা আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের দায়িত্ব নিয়ে কথা বলবে সবার সঙ্গে যারা ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক আছে। সেক্ষেত্রে যদি সমস্যা হয়, ক্রিকেট বোর্ড একটা ভালো সমাধান দেবে আমার কাছে মনে হয়।