শৈশবের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার সৌভাগ্য তার হয়নি। বরং মাসে দুইবার জেলগেটে দেখা হত বাবার সঙ্গে।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ‘মুত্যুঞ্জয়ী’ উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ছোটবেলায় তোমাদের অনেকেই এখন বাবা-মার হাত ধরে স্কুলে যাও।আমাদের কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয়নি। আমাদের বাবার সঙ্গে দেখা হতো কারাগারে। জেলগেটে মাসে দুইবার দেখা করতে পারতাম।
তিনি বলেন, স্কুল থেকে জেলগেটে গিয়েছি, কলেজ থেকে গিয়েছি, ইউনিভার্সিটি থেকেও- এই ছিল আমাদের জীবন। কিন্তু আমাদের কোনো ক্ষোভ ছিল না। কারণ আমরা জানতাম, আমাদের বাবা সংগ্রাম করছেন দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য।
‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ উদ্বোধনের পর বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৮ সালে আমাদের মায়ের ভাষা, বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার যখন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। তখন তিনি এর প্রতিবাদ করেন এবং আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেখানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার সংগ্রাম শুরু হয়। সেই সংগ্রামের পথ বেয়েই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। বাঙালি জাতি যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে, আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছি।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ গত ৫২ বছরে অনেকদূর এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ থেকে ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ এখনকার বাংলাদেশের মতো ছিল না। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, চিকিৎসাহীনতা, গৃহহীন, ভূমিহীন মানুষের ক্রন্দনে বাংলার আকাশ বাতাস ভারী ছিল। এই বাঙালি জাতিকে আর্থসামাজিক মুক্তি দেওয়ার জন্যই কিন্তু জাতির পিতার সংগ্রাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার স্বপ্ন ছিল বাংলার প্রতিটি মানুষের ঘর হবে, গৃহহীন, ভূমিহীন মানুষের আশ্রয় হবে। সব মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে, কাপড় পাবে, চিকিৎসা পাবে। কিন্তু তিনি সেই কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। আজকে অন্তত এইটুকু বলতে পারি, তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে প্রায় ১৫ বছর হয়ে এলো, এর মধ্যে একটা বদলে যাওয়া বাংলাদেশ আমরা রূপন্তর করতে পেরেছি।
সরকারপ্রধান বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ, ওয়াইফাই কানেকশন আছে আমাদের। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ আমরা উৎক্ষেপণ করেছি। আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি শিক্ষা দিচ্ছি। এভাবে দেশের মানুষকে একটা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জাতি হিসাবে গড়ে তুলতে পেরেছি।
‘আজকের ছোট্ট শিশুরা হবে আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশের সৈনিক। সেজন্য তোমাদের নিয়ে এলাম। স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকনোমি, স্মার্ট সোসাইটি আমরা গড়ে তুলব।’
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ যতদূর এগিয়ে এসেছে এটা ধরে রেখেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আজকের ছোট্ট শিশুরা আগামী দিনের সৈনিক, যারা স্মার্ট বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে।
শিশুদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, শিক্ষাই জীবনের সব থেকে বড় সম্পদ। টাকাপয়সা, ধনদৌলত সম্পদ নয়। সম্পদ হচ্ছে একমাত্র শিক্ষা। শিক্ষা গ্রহণ করলে সেটা চোরেও নিতে পারবেনা, ডাকাতেও নিতে পারবেনা। সেই শিক্ষাটা থাকলে পরে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সকাল ১০টায় একদল স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোর, তিন বাহিনীর প্রধান ও মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্যদের নিয়ে নতুন এই ম্যুরাল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ম্যুরালটি ২০২১ ও ২০২২ সালে বিজয় দিবসের প্যারেডে প্রদর্শিত হওয়ার পর ব্যাপক প্রশংসিত হয়। তাই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিজয় সরণি মোড়ের সড়ক দ্বীপে এটি স্থাপনের জন্য উপযুক্ত জায়গা হিসেবে নির্বাচন করেন। পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্ববধানে ম্যুরালটি সেখানে স্থাপন করা হয়।
সকাল ১০টার কিছু সময় আগে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন অনুষ্ঠান স্থলে আসেন। এই সময় দর্শক সারিতে থাকা একদল শিশুকে ঢেকে মঞ্চের দুই পাশে নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সবাই মিলে বেলুন উড়িয়ে করতালির মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় ম্যুরালটির।