ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ঠেকানো যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন বহুমাত্রিক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়া ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ঠেকানো সম্ভব নয়। চলতি বছরে ডেঙ্গু মৌসুম শেষেও বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীতে ঠাঁই নেই অবস্থা। হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। নভেম্বরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। যা অন্য মাসগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। রাজধানীর বাইরে ৬০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। ঢাকা মহানগরে ৪০ শতাংশ রোগী থাকলেও মৃত্যু বেশি রাজধানীতেই।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও দু’জন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪৩৮ জন। নভেম্বরের ২২ দিনে মারা গেছেন ১২৩ জন। আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ২৩ হাজার ৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪৫৮ জন ডেঙ্গু নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৪ হাজার ৮২৬ জন ডেঙ্গুরোগী। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ১৮১ জন রয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশন বাদে) ৫৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬২ জন, বরিশাল বিভাগে ২০ জন, খুলনা বিভাগে ৬৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২২ জন, রাজশাহীতে ৪৭ জন, রংপুর বিভাগে ২ জন এবং সিলেট বিভাগে একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় সব হাসপাতাল ডেঙ্গুর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠায় না। চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ২২শে নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৮৪ হাজার ৮২৬ জন। যাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ২০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত মৃত ৪৩৮ জনের মধ্যে ৫০ দশমিক ৯০ শতাংশ নারী এবং ৪৯ দশমিক ১০ শতাংশ পুরুষ।
বহুমাত্রিক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়া ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ঠেকানো সম্ভব নয়: রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ আয়োজিত ৫ম মাসিক সভায় বৈজ্ঞানিক অধিবেশনে উপস্থাপিত গবেষণা পত্রে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা রোধে বহুমাত্রিক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা তুলে ধরা হয়েছে। ২১শে নভেম্বর এশিয়াটিক সোসাইটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান খানের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)-এর এন্টোমোলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার।
জনস্বাস্থ্যে ব্যবহৃত বিষাক্ত কীটনাশকগুলোর মানব সহ অন্যান্য সকল জীব এবং পরিবেশের ওপর বিষক্রিয়ার প্রভাব মুক্ত করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। বহুমাত্রিক ব্যবস্থাপনার মূলে যে সকল বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধে জোর দেয়া হয় তা নিম্নে দেয়া হলো- জনসচেতনতা সৃষ্টি ও জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিতকরণ। সুপরিকল্পিত নগরায়ন বাস্তবায়ন। পরিবেশ দূষণমুক্ত নিশ্চিতকরণ। মশকীর প্রজননস্থল চিহ্নিতকরণ ও ধ্বংসকরণ। অতি দক্ষ ও শক্তিশালী মনিটরিং ও মূল্যায়ন নিশ্চিতকরণ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় নিশ্চিতকরণ। যুক্তিসংগত ও ন্যূনতম কীটনাশকের ব্যবহার। জৈবিক দমন ব্যবস্থাপনার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। আইপিভিএম-এর সঠিক প্রয়োগ। রোগীর প্রকৃত ঠিকানা ও ইতিহাস নিশ্চিত করে সংক্রমিত মশা বিস্তার রোধে ক্রাশ প্রোগ্রামের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া। সর্বোপরি গবেষণা ও এর ফলাফল ন্যাশনাল ডেঙ্গু প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল স্ট্র্যাটেজি ২০২৪-২০২৩ এর সঙ্গে সমন্বয় করে যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণের কথা তুলে ধরা হয় সেমিনারে।