গত আগস্টে এক অতর্কিত হামলায় রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের দখল নেয় ইউক্রেন। তবে ওই সময়ের পর থেকে কুরস্কে একের পর এক পাল্টা হামলা চালিয়ে গেছে রাশিয়া। যার ফলে দখল অঞ্চলের ৪০ ভাগেরও বেশি অংশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে ইউক্রেন। এমনটাই বলেছে ইউক্রেনের এক শীর্ষ সামরিক সূত্র।
কিয়েভের বাহিনী অতর্কিত হামলা চালিয়ে আড়াই বছরের এই যুদ্ধে প্রথমবারের মতো মস্কোকে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দেয়। তবে এই সূত্র (ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফের সদস্য) বলছেন, ইউক্রেন কুরস্কের দখল নেয়ার পর রাশিয়া সেখানে প্রায় ৫৯ হাজার সৈন্যমোতায়েন করেছে। তিনি বলেন, ‘এক পর্যায়ে আমাদের নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ এক হাজার ৩৭৬ বর্গকিলোমিটার ভূখণ্ড ছিল। তবে এখন দখলে থাকা ভূখণ্ড অনেকটাই কমে এসেছে। শত্রুপক্ষ পাল্টা হামলার সংখ্যা ও মাত্রা বাড়াচ্ছে। এখন আমরা প্রায় ৮০০ বর্গ কিলোমিটার ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছি। সামরিক সক্ষমতার দিক দিয়ে যতক্ষণ বিষয়টি যৌক্তিক থাকবে, ততক্ষণ আমরা এই ভূখণ্ড দখলে রাখব। ইউক্রেনের কুরস্ক অভিযান ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রুশ ভূখণ্ডে কোনো বিদেশী শক্তির প্রথম স্থল অভিযান, যা মস্কোকে পুরোপুরি অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দেয়।
কিয়েভের উদ্দেশ্য ছিল কুরস্কে হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার চলমান হামলা থামানো। তারা চেয়েছিল, রাশিয়া যেন বাধ্য হয়ে ওই দুই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সৈন্য সরিয়ে এনে নিজ ভূখণ্ড সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করে। এতে যেকোনো ধরনের শান্তি আলোচনায় কিয়েভ কিছু বাড়তি সুবিধা পেত। কিন্তু রুশ বাহিনী এখনো নিরবচ্ছিন্নভাবে ইউক্রেনের পূর্বের ডনেটস্ক অঞ্চল ধরে এগিয়ে যাচ্ছে।
ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফের সূত্র আবার জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়াকে সহায়তা করতে কুরস্ক অঞ্চলে ১১ হাজার উত্তর কোরীয় সৈন্য এসে পৌঁছেছে। তবে তাদের বেশিভাগ সৈন্যই এখনো তাদের প্রশিক্ষণ চূড়ান্ত করছে। কুরস্ক অঞ্চল বিষয়ে কিয়েভের সর্বসাম্প্রতিক অবস্থার বিশ্লেষণ নিয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্স রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি। প্রদত্ত সংখ্যা বা বর্ণনার সত্যতা রয়টার্স নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি। মস্কো কুরস্কে উত্তর কোরীয় সৈন্যর উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিতও করেনি, নাকচও করেনি।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ১১ নভেম্বর বলেন, তার বাহিনী বিপদে আছে। তারা শুধু কুরস্কে রাশিয়ার ক্র্যাক প্লাটুনের অতিরিক্ত সৈন্যদের সাথেই লড়ছে না, একইসাথে পূর্ব ইউক্রেনের দুই যুদ্ধক্ষেত্র সুরক্ষিত রাখার জন্যেও প্রাণপণ লড়ছে এবং দক্ষিণে (রুশ) পদাতিক সৈন্যদের সম্ভাব্য হামলা প্রতিহত করার জন্যেও তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ মুহূর্তে রাশিয়ার দখলে ইউক্রেনের এক পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড রয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলছেন, তিনি চান কিয়েভ নেটো সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার অভিলাষ ত্যাগ করুক এবং তার আংশিক দখলে থাকা চার ইউক্রেনীয় অঞ্চল থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেক। পুতিনের এসব দাবিকে কিয়েভ আত্মসমর্পণের সমতুল্য বলে গণ্য করে নাকচ করেছে।
সূত্র : ভিওএ