ঘটনাটি তুরস্কের ভূমিকম্পকবলিত আনতাকিয়া শহরের। ওই শহরের বাসিন্দা এরদেম আভসারোগলু। ওপরে যাঁদের কথা বলা হয়েছে, তাঁরা আভসারোগলুর বোন, তাঁর স্বামী ও দুই শিশুসন্তান। তাঁদের ভবনটিতে আগুন লেগেছিল ভূমিকম্পের পরদিন, অর্থাৎ ৭ ফেব্রুয়ারি। এর পাঁচ দিন পর গতকাল রোববার ওই ভবনের ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করেছেনতবে সেখানে প্রিয় মানুষগুলোকে খুঁজে পাবেন, এমন আশা আগেই হারিয়েছেন আভসারোগলু। তিনি বলেন, ‘আজ ভূমিকম্পের পর সপ্তম দিন। উদ্ধারকাজে নামা সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এখন আমাদের চাওয়াটা হলো যেন মরদেহগুলো অক্ষত অবস্থায় পাই। তবে তেমন কিছুই খুঁজে পাইনি। মনে হয় সবাই আগুনে পুড়ে গেছে।’
ওই ভবনে ৮০ জন বাস করতেন। আগুন লাগার আগে সেখান থেকে ২১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল, পাওয়া গিয়েছিল ১২টি মরদেহ। নিখোঁজ ছিলেন ৪৭ জন। পরে উদ্ধার করা মরদেহগুলোর অবস্থা দেখে ক্ষোভ সামলাতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। কেমন অবস্থা? আভসারোগলুর ভাষায়, ‘আগুনে পুড়ে যাওয়ার কারণে কাছের মানুষগুলোর শুধু হাড় খুঁজে পেয়েছে অনেক পরিবার।
মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের মতোই ক্ষুব্ধ উদ্ধারকারীরাও। তাঁদের প্রশ্ন, কীভাবে মাত্র ১০ বছর আগে নির্মাণ করা একটি ভবন ধসে পড়তে পারে, যেখানে আশপাশের অনেক পুরোনো ভবন এখনো টিকে আছে। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা পাঠানো নিয়েও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এমনই একজন উদ্ধারকারী সেরহাত দেদে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা তাঁর বাবার মরদেহের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে শুধু দাঁত দেখে শনাক্ত করতে পেরেছেন তিনি। দেদে বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছ থেকে এক সপ্তাহ ধরে কোনো সহায়তা (উদ্ধার সরঞ্জাম) পাইনি। যদি সহয়তা পেতাম, তাহলে আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে পারতাম।’
তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ৬ ফেব্রুয়ারি দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। প্রথমটি ছিল ৭ দশমিক ৮ মাত্রার, পরেরটি ৭ দশমিক ৫ মাত্রার। ভূমিকম্পে শুধু তুরস্কে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সিরিয়ায় মারা গেছেন সাড়ে চার হাজারের বেশি মানুষ। দুই দেশেই হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছে। টিকে থাকা অনেক ভবনের অবস্থাও খুবই নাজুক।